বিশ্বজুড়ে আবারও হুমকির মুখে পড়েছে পোলিও নির্মূল কার্যক্রম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত গ্লোবাল পোলিও নির্মূল উদ্যোগ (জিপিইআই) জানিয়েছে, তারা ২০২৬ সাল থেকে বাজেটের প্রায় ৩০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করছে। ২০২৯ সালের মধ্যে এই সংস্থা ১.৭ বিলিয়ন ডলার তহবিল ঘাটতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে, পোলিও নির্মূলে বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ডব্লিউএইচও’র পোলিও নির্মূলবিষয়ক পরিচালক জামাল আহমেদ জানান, বাজেট কমে যাওয়ার অর্থ হলো, অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে বা সীমিত করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যে পর্যায়ে পৌঁছেছি, এখন যদি অর্থের জোগান বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বহু বছরের অগ্রগতি ব্যাহত হবে।’
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই আর্থিক সংকটের মূল কারণ হলো আন্তর্জাতিক সহায়তার ঘাটতি। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কম সহায়তা পাওয়া এবং জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মতো বড় দাতাদের অর্থায়ন কমে যাওয়া এই ঘাটতির প্রধান কারণ। বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউএইচও-তে তাদের আর্থিক সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে।
তবে পরিস্থিতি সত্ত্বেও আশাবাদী রয়েছেন জামাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পোলিও নির্মূল এখনো সম্ভব। আমরা শুধু চাই বিশ্ব সম্প্রদায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকুক এবং নিশ্চিত করুক, কোনো শিশুই যেন টিকা থেকে বাদ না পড়ে।’
তহবিল সংকট মোকাবিলায় জিপিইআই এখন সম্পদ বণ্টনে অগ্রাধিকার ভিত্তিক কৌশল নিচ্ছে। তারা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি ও টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করবে। পাশাপাশি, হামসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংস্থাটি ‘ফ্র্যাকশনাল ডোজিং’ পদ্ধতিও গ্রহণ করতে যাচ্ছে যেখানে একটি পূর্ণ টিকার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ ডোজ ব্যবহার করা হবে। এতে একই পরিমাণ টিকা দিয়ে আরও বেশি শিশুকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে। নিম্ন-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে কার্যক্রম সীমিত রাখা হবে, তবে কোথাও নতুন সংক্রমণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
১৯৮৮ সালে বৈশ্বিক পোলিও নির্মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে রোগটির প্রকোপ নাটকীয়ভাবে কমেছে। এক সময় যে রোগে প্রতিবছর লাখো শিশু পঙ্গু হতো, এখন তার সংখ্যা হাতে গোনা। তবুও ভাইরাসটি পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, পোলিও ভাইরাসের অ্যাসিম্পটোমেটিক (উপসর্গহীন) সংক্রমণ শনাক্ত করা কঠিন, যা নিয়ন্ত্রণের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৫ সালেও আফগানিস্তান ও পাকিস্তান এই দুটি দেশেই এখনো স্থানীয়ভাবে পোলিও ভাইরাস টিকে আছে। এ বছর এই দুই দেশে ওয়াইল্ড পোলিও ভাইরাসের ৩৬টি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। জিপিইআই জানিয়েছে, এসব উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তহবিল ঘাটতি নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত উদ্যোগ না নিলে পোলিও নির্মূলের স্বপ্ন আরও পিছিয়ে যেতে পারে।
সূত্র: আল জাজিরা
এক রক্ত পরীক্ষায় শনাক্ত হবে ৫০ ধরনের ক্যান্সার
ব্রোকলির অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা
লিভারের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর যে খাবার