রমজানের প্রথম দিন পনেরো আবহাওয়া বেশ স্বস্তিদায়ক হলেও এখন কিন্তু তেঁতে উঠেছে প্রকৃতি। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসী। রোজাদাররা এ সময়ের রোজার অশেষ ফজিলত সম্পর্কে জানেন। তবে তারপরও সুস্থভাবে বাকি রোজাগুলো রাখতে হলে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। এ সময় সুস্থ থাকতে তাই মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম।
১. রমজানে দৈনন্দিন কাজে ঘরের বাইরে বের হতেই হয়। তবে এ সময় সূর্যের আলো এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রোদের তীব্রতা বেশি থাকে। একান্ত জরুরি কাজ না থাকলে বাইরে বের না হওয়াটাই ভালো।
২. বৃষ্টি নাহলে আমরা সাধারণত ছাতা নিতে চাই না। কিন্তু এই তীব্র রোদে ছাতা ব্যবহার করা দরকার। এ সময় বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা সঙ্গে নিবেন। যাতে সরাসরি রোদের মধ্যে থাকতে না হয়। এ সময় চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপও ব্যবহার করা যেতে পারে। যারা মাঠেঘাটে কাজ করেন বা রিকশা চালান তারা মাথায় 'মাথাল' জাতীয় টুপি ব্যবহার করতে পারেন।

৩. গরমে ঘাম হয়ে শরীর থেকে প্রচুর পরিষ্কার পানি বের হয়ে যায়, তখন ইলেট্রোলাইট ইমব্যালেন্স তৈরি হতে পারে। এ কারণে এই সময়টাতে ইফতারে প্রচুর পানি পান করতে হবে। স্যালাইন, লেবু পানি, ফলের জুস খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। তবে খোলা, পথের পাশের বিক্রি হওয়া দুষিত পানি বা সরবত এড়িয়ে চলতে হবে।
৪. গরমের এই সময়টায় চেষ্টা করুন আরামদায়ক কাপড় পরতে। জিন্স বা মোটা কাপড় না পরে সুতির নরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। যেসব কাপড় পরলে অতিরিক্ত ঘাম হয় তা এড়িয়ে চলুন। শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করবে এমন ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিন। একইভাবে এ সময় সাদা বা হালকা রঙের কাপর পরা ভালো। কারণ হালকা কাপড় তাপ শোষণ করে কম।
৫. গরমের সময় খোলামেলা জুতা পরা উচিত, যাতে পায়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। কাপড় বা সিনথেটিকে বাদ দিয়ে চামড়ার জুতা হলে ভালো, কারণ এতে গরম কম লাগে। সম্ভব হলে মোজা এড়িয়ে চলা যেতে পারে।
৬. ইফতারে ফাষ্ট ফুড বা তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।এসব খাবার হজম করতে সময় বেশি লাগে। ফলে সেটি শরীরের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে এবং শরীরের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য সেটি আরো বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। সামনেই ঈদ। তাই রোজার এ' কটা দিন খাবারের মেন্যু থেকে তেলযুক্ত খাবার, মাংস, বিরিয়ানি, ফাস্টফুড ইত্যাদি বাদ দিন। স্বস্তিতে থাকতে শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খান।

৭. এ সময় গরমে খাবার-দাবার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বাসী খাবার বা আগের দিন রান্না করা খাবার খাওয়ার আগে দেখে নিতে হবে যে, সেটি নষ্ট কিনা। এ জাতীয় খাবার খেলে ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানাসহ পেটের অসুখ হতে পারে।
৮. গরমের সময় প্রতিদিন অবশ্যই গোসল করতে হবে, যা শরীর ঠাণ্ডা রাখবে। ওজু করার ফলে এমনিতে দিনে একাধিকবার হাত, মুখ, পা পানি দিয়ে ধোয়া হয়। তারপরও মাঝেমধ্যে বেশি গরম লাগবে হাত-মুখ ধুয়ে ফেলুন। বাইরে বের হলে একটি রুমাল ভিজিয়ে সঙ্গে রাখতে হবে, যা দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর মুখ মুছে নেয়া যাবে।
৯. ঈদ উপলক্ষে অনেকে এ সময় বাজারে ছুটোছুটি করছেন। মনে রাখবেন, প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। ফলে দুর্বল লাগা ও প্রচণ্ড পিপাসা হওয়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে প্রেশার পরীক্ষা করে দেখে নিন। চেষ্টা করুন ভিড় এড়িয়ে কেনাকাটা সারতে।
