ভালো থাকার আশায় প্রতিদিন ভিটামিন খাচ্ছেন? মাত্রাতিরিক্ত বা ভুলভাবে ভিটামিন খাওয়া যেমন বিপজ্জনক। অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণ হতে পারে আপনার শরীরের জন্য বিষের মতো ক্ষতিকর। বিশেষ করে ফ্যাট-সলিউবল ভিটামিন (এ, ডি, ই এবং কে) শরীরে জমে গিয়ে কিডনি ও হাড়ের ক্ষয় ডেকে আনতে পারে। বিশেষত লিভারের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
হিন্দুস্তান টাইমসে উইশনিউ ওয়েলনেস-এর চিকিৎসক ডা. খুরানা জানান, অনেকেই না বুঝে নিয়মিত উচ্চমাত্রার ভিটামিন গ্রহণ করছেন। যেমন, প্রতি সপ্তাহে ৬০,০০০ আইইউ মাত্রার ভিটামিন ডি অ্যাম্পুল নদয়া—যা শরীরের জন্য মারাত্মক হতে পারে, বিশেষত যদি পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ না থাকে।

লিভারের ক্ষতি: বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্যাট-সলিউবল ভিটামিন যেমন—ভিটামিনএ, ডি, ই এবং কে—শরীরে জমা হয়ে থাকে এবং সহজে মূত্রের মাধ্যমে বের হয় না। ফলে দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত গ্রহণে এসব ভিটামিন লিভারে জমা হয়ে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ভিটামিন এ-এর অতিরিক্ত সেবনে লিভার সেল ধ্বংস, লিভার ফাংশন ব্যাহত হওয়া, এমনকি হেপাটাইটিসের মতো প্রদাহজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন ডি-এর অতিরিক্ত মাত্রা শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা লিভারে ক্যালসিয়াম জমে গিয়ে ফাংশনাল জটিলতা সৃষ্টি করে। আবার ভিটামিন ই-এর উচ্চমাত্রা রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়, যার ফলে লিভারের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে।
অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো—
* মাথাব্যথা বা বমি ভাব
* চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া
* অতিরিক্ত তৃষ্ণা, পেশি দুর্বলতা বা ঘন ঘন প্রস্রাব
* অস্বাভাবিক রক্তপাত বা সহজে রক্ত জমাট না বাঁধা

সঠিকভাবে ভিটামিন গ্রহণের উপায়
খাদ্যকে অগ্রাধিকার দিন: ডাল, শাকসবজি, দই, বাদাম, মিলেটস দিয়ে তৈরি বৈচিত্র্যময় ভারতীয় থালি বেশিরভাগ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ঘাটতি পূরণে সক্ষম।
প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট: শুধু মাত্র ল্যাব-নির্ধারিত ঘাটতি বা বিশেষ জীবনধাপ (যেমন গর্ভাবস্থা, বার্ধক্য) অনুযায়ী ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নিন।
ডোজ চেক করুন: দৈনিক পরিমাণ (আরডিএ)-এর ১০০% বা তার কম মাত্রা সম্পন্ন অনুমোদিত সাপ্লিমেন্ট বেছে নিন।
ডাবল ডোজ এড়িয়ে চলুন: একসঙ্গে মাল্টিভিটামিন ও আলাদা ‘বুস্টার’ গামি সেবন করলে ডোজ ডুপ্লিকেট হতে পারে। সব উৎস থেকে মোট গ্রহণ হিসেব রাখুন।
রক্ত পরীক্ষা করুন: উচ্চমাত্রার সাপ্লিমেন্ট আবার নেয়ার আগে রক্তে ভিটামিন লেভেল পরীক্ষা করান। প্রয়োজনে ডোজ কমান বা পরিবর্তন করুন।
অতিরিক্ত ভিটামিন ডি কতটা ভয়ংকর হতে পারে: ভারতের অনেক হাসপাতালেই ভিটামিন ডি টক্সিসিটি এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। করন খুরানা বলেন, “সঠিক তথ্য ছাড়া সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেমন বিপদ ডেকে আনে, তেমনি সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে এগুলো হতে পারে স্বাস্থ্য রক্ষার বড় সহায়। মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত ভিটামিন ভামেই কিন্তু ভালো থাকা নয়।
সুস্থ থাকার আশায় অনেকেই প্রতিদিন ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া, মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন খাওয়া যেমন বিপজ্জনক, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে তা লিভার, কিডনি কিংবা স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। যেকোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করাই সবচেয়ে নিরাপদ।
