প্রায় শোনা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা। অনেক সময় দেখা যায় একদম সুস্থ মানুষ হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাক করেছেন। কিংবা হৃদরোগে ভুগে কষ্ট পাচ্ছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, হার্টের রোগ এবং হার্ট অ্যাটাক কখনও হঠাৎ করে হয় না, বরং বছরের পর বছর ধরে নীরবে হার্টের ক্ষতি করতে থাকে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার কিছু ভুল কিংবা জিনগত সমস্যা হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে।
কার্ডিওলজিস্ট ডা.অমিত ভূষণ শর্মা জানান, বয়স বা পারিবারিক ইতিহাসের মতো কিছু বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও, অনেকগুলো ঝুঁকিই আমরা জীবনধারার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। সেগুলো সময়মতো চিহ্নিত করে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
যেসব বিষয় হার্টের ক্ষতি করে
কার্ডিওলজিস্ট ডা. অমিত ভূষণ শর্মা হার্টের ক্ষতি করে এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো-
১) ধূমপান ও পরোক্ষ ধূমপান
ধূমপায়ীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ। সিগারেট ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত করে, প্লাক জমায় এবং রক্তে অক্সিজেন কমায়। এমনকি পরোক্ষ ধূমপানও ঝুঁকিপূর্ণ।
২) অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অতিরিক্ত লবণ
অতিরিক্ত চর্বি, ট্রান্স ফ্যাট, কোলেস্টেরল এবং লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে ধমনীর ক্ষতি করে। ফল, শাকসবজি ও পূর্ণশস্যভিত্তিক খাদ্য হৃদয়ের সুরক্ষায় কার্যকর।
৩) দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
চাপ থেকে কর্টিসল হরমোন বেড়ে গিয়ে রক্তচাপ ও প্রদাহ সৃষ্টি করে। যোগব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি বা মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
৪) নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং প্লাক জমায়। নিয়মিত ওষুধ, ডায়েট ও শরীরচর্চা অপরিহার্য।
৫) অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
পেটের চর্বি খারাপ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। সামান্য ওজন কমালেও হৃদয়ের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৬) শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
ব্যায়ামের অভাব হৃদপিণ্ড দুর্বল করে। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৭) মদ্যপান
শরীরের ভয়াভ ক্ষতি করে মদ্যপানের অভ্যাস। মদ্যপানের ফলে রক্তচাপ বাড়ায়, হার্টের পেশি দুর্বল করে এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ঘটাতে পারে।
৮) দাঁতের যত্ন না করা
দাঁতের জীবাণু রক্তে ছড়িয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ব্রাশ, ফ্লস ও ডেন্টাল চেকআপ জরুরি।
৯) উচ্চ রক্তচাপ
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ ধমনী সংকুচিত করে এবং হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত চাপে ফেলে। তাই নিয়মিত পরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রয়োজন।
১০) স্লিপ অ্যাপনিয়া
ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট বারবার থেমে যাওয়া হৃদপিণ্ডে চাপ ফেলে। চিকিৎসা ও সিপিএপি থেরাপি এতে সহায়ক।
১১) অতিরিক্ত পেইনকিলার সেবন
নিয়মিত পেইনকিলার সেবনে শরীরের ক্ষতি হয়। এই ধরণের ওষুধ রক্তচাপ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
১২) পারিবারিক ইতিহাস
পরিবারে যদি আগে হার্টের সমস্যা থাকে, তাহলে নিজের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই বেশি সতর্কতা জরুরি।
১৩) নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা এড়ানো
রুটিন চেকআপ না করলে নীরব সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল ধরা পড়ে না।
১৪) ওষুধ বাদ দেয়া
উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বা ডায়াবেটিসের ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়মিত ওষুধ খাওয়া বাধ্যতামূলক। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
