ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বেনজীরের ব্যক্তিগত চিকিৎসকও ২৫০ বিঘা জমির মালিক

আপডেট : ০৪ জুন ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নিজমাওনা গ্রামের বিএনপি বাজার এলাকার আশপাশে যত দূর চোখ যায় সবখানেই ‘ডা. ইকবাল’ নামে এক ব্যক্তির সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। প্রথমদিকে এলাকার লোক বিভ্রান্ত হলেও, এখন সবার কাছে পরিস্কার হয়েছে এই ব্যক্তির পরিচয়। ডা. ইকবাল নামের ব্যক্তি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। তার নামে প্রায় ২৫০ বিঘা জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। 

পতিত জমি, সরকারি জমি, জঙ্গল কিংবা আবাদি জমি সবখানেই সাইনবোর্ডে ডা. ইকবালের নাম থাকলেও এলাকাবাসী বলছেন, চিকিৎসকের নামে কেনা হলেও জমিগুলো পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের হতে পারে।

বেনজীর আহমেদ গা-ঢাকা দেওয়ার পর এলাকার জমিগুলো থেকে সাইনবোর্ড সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও সাইনবোর্ডের স্থানে গাছ লাগানো হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলার নিজমাওনা গ্রামে চিকিৎসক ইকবালের বাড়ি। তার বাবা গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন। ইকবাল পুলিশ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তিনি বেনজীর আহমেদের ব্যক্তিগত চিকিৎসকও ছিলেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় প্রায় ২৫০ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। দখল করেছেন সরকারি জমি। পছন্দের জমি কিনতে এলাকাবাসীকে উচ্ছেদ করেছেন।

জানা যায়, এখনও নিজমাওনা গ্রামে কমপক্ষে ১৫ স্পটে চিকিৎসক ইকবালের নামে সাইনবোর্ড ঝুলছে। নিজমাওনা গ্রামের রুহুল আমিন মাস্টারের বাড়ির পশ্চিম পাশে ৩৫ বিঘা জমি, একই গ্রামের মৃত আব্দুল কাদির পীরের আশপাশের ২০ বিঘা, মৃত আহমেদ আলীর ছেলে তাজউদ্দিনের বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে চিংড়ির খাল পর্যন্ত ৫০ বিঘা, মধ্য নিজমাওনার আমিনুল ইসলাম মাস্টারের বাড়ির পাশে ৫০ বিঘা, নিজমাওনা গ্রামের পুটিমারা বাজারের পশ্চিম পাশে সালদহ নদের পাশে ১৫ বিঘা, নিজমাওনা বড়চালা বাজারের দক্ষিণ পাশে ২৫ বিঘা। এ ছাড়া গাজীপুর মৌজার ৮১৫ নম্বর এসএ দাগের কমপক্ষে ৫০ বিঘা জমিতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছিলেন তিনি।

এর বাইরে এলাকার ইসমাইলের মোড়ের পশ্চিম পাশে আলিশান বাড়িসহ কমপক্ষে ১০ বিঘা জমিতে তার নামে সাইনবোর্ড ছিল।

নিজমাওনা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, বেনজীর আহমেদ ও চিকিৎসক ইকবালের হয়ে জমি কিনে দিয়েছেন গ্রামের তাজুল ইসলাম, আইনুদ্দিন, মাসুদ মেকার, তৌহিজ উদ্দিন তহু ও আয়ুব আলী। এই জমিগুলো দেখাশোনার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। যারা এসব জমি পাহারা দিতেন, দুদকের অনুসন্ধান শুরুর পর তারাও আর এলাকায় নেই।

শ্রীপুরের এক ভুক্তভোগীর স্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে একদিন স্থানীয় বাসিন্দা তাজউদ্দিন এসে জানান, এই বাড়ি ভেঙে চলে যেতে হবে। এরপর তারা আমাদের বাড়ির চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দেন। পরে বাধ্য হয়ে আমরা বাড়ি ছেড়ে চলে আসি। তাদের ভয়ে মুখ খুলতে পারি না। আমরা অসহায় মানুষ।

এ প্রসঙ্গে শ্রীপুরের আরও জন বলেন, ঘুরে দেখেন, অসংখ্য ঘরবাড়ি পরিত্যক্ত পাবেন। এগুলো থেকে মানুষ চলে গেছেন। এমনিতে যাননি, কীভাবে গেছেন খোঁজখবর নেন, তাহলে বুঝবেন। তিনি সরকারি জমি জবরদখলে নিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন। আরও কত ঘটনা, সব জানতে পারবেন।

শ্রীপুরের সাবরেজিস্ট্রার মো. ওসমান গনি মণ্ডল বলেন, আমি এই অফিসে যোগদানের পর চিকিৎসক ইকবালের নামে ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আমরা দলিল যাচাই-বাছাই করছি। এখানে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের নামে বা তার কোনো স্বজনদের নামে কোনো দলিল হয়নি।

এদিকে সরকারি জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাওনা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহাব। তার মতে, গাজীপুর মৌজার ৮১৫ নম্বর এসএ দাগের সরকারি জমির পরিমাণ ১৮৬ একর। এসব থেকে কিছু জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। জমিতে সাইনবোর্ড দিয়ে মালিকানা দাবি করলেও ১ শতাংশ জমির নামজারি খারিজ দেওয়ার সুযোগ নেই।

এসব বিষয়ে জানতে বেনজীরের চিকিৎসক ইকবালের মোবাইলে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

MN/AST
আরও পড়ুন