বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে ভারতের অনেক মিডিয়া। হিন্দু নির্যাতনের মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা। দেশের অনেকহিন্দু পরিবার সেই ‘ষড়যন্ত্র’ প্রকাশ্যে আনছেন।
ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের কলকাতায় প্রবেশ করতেই বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। পরে সেখানকার সাংবাদিকদের শিখিয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকার না দিলে পাসপোর্ট রেখে দেওয়ার হুমকি আসছে। এভাবেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের দুটি চ্যানেলে ছড়ানো গুজবের সত্যতা মিলেছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) পরিবারের অভিভাবকেরাই জানান এসব তথ্য।
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের মিথ্যা বর্ণনা সন্তানের মুখে ভারতীয় মিডিয়ায় দেখে তারা বিস্মিত। সন্তানের এমন কাণ্ডে তারা বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ভারতের এবিপি আনন্দ টিভিতে একটি সাক্ষাৎকার দেন শুভ কর্মকার। তিনি ফরিদপুরের শহরের নীলটুলীর স্বর্ণকার পট্টির নিউ গিনি ভবন জুয়েলার্সের মালিক সুনীল কর্মকারের ছেলে। ওই সাক্ষাৎকারে শুভ দাবি করে বলেন, ‘বাংলাদেশের খুবই খারাপ অবস্থা। হিন্দুদের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে বাড়ি-ঘর দখল করা হচ্ছে। মন্দির-প্রাসাদ পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছোট-ছোট বাচ্চাদের জন্য খারাপ লাগে। তাদের মারধর করা করা হচ্ছে। মা-বোনদের ওপরে নির্যাতন করা হচ্ছে। রাতে দোকান থেকে বাড়িতে যাওয়ার পর ভাবতে হয় সকালে দোকানের উদ্দেশে আবার বের হতে পারব কি না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভ কর্মকারের এই বক্তব্য জানাজানি হলে নিন্দার ঝড় ওঠে। স্থানীয় সাংবাদিকেরা সরেজমিনে বিষয়টি জানতে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যান। এ সময় শুভর বাবা সুনীল কর্মকার ও মা দুজনেই তাদের ছেলের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।
শুভর মা বলেন, ‘আমার ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই এমন। কোনো কথা শোনে না। এ জন্য আমরা অনেক দুঃখিত। আমরা কখনোই এই দেশে কোনো নির্যাতনের শিকার হইনি। আমার মেয়েরা, ভাসুরের মেয়েরা তারাও কখনোই এ ধরনের হামলার শিকার হয়নি। ভারতের ওই সাংবাদিকেরা খারাপ। তারা ইচ্ছা করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা বাংলাদেশে খুবই নিরাপদে রয়েছি।’
শুভর বাবা সুনীল কর্মকারের বলেন, ‘‘ওর এই কথা শুনে আমরা নিজেরাই অবাক হয়ে গেছি। ও কী করে এই কথা বলল ভাবতেও পারছি না। আমরা দেশে কোনো ধরনের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হইনি। আমি ওকে ফোন করেছিলাম ওর এই কখা শুনে। ও বলল, ‘পেট্রাপোলে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার পরে সেখানকার সাংবাদিকেরা আমার পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। এরপর ওদের শিখিয়ে দেওয়া মতো কথা না বললে পাসপোর্ট দেবে না বলে ভয় দেখায়।’ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নষ্টের উদ্দেশে এটি করা হয়েছে।’’
এদিকে, দ্য ওয়াল নামে আরেকটি চ্যানেলে এক নারী সংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেকে বাংলাদেশ থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই মাস ধরে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অমীয় সরকার। জানা গেছে, অমীয় সরকার ২০২১ সালের নভেম্বরে গঠিত জেলা ছাত্রলীগের কমিটির ৮ নম্বর সহ-সভাপতি ছিলেন। পরের বছর অনুমোদিত কমিটি থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। অবশ্য তার আগেই এই অমীয় সরকারের নাম ছড়িয়ে যায় খন্দকার মোশাররফের হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার হিসেবে। এই অমীয় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলা মামলার অন্যতম আসামি।
বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মিডিয়ায় ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি
বাংলাদেশে নারীদের উপর ফতোয়া জারির ভুয়া তথ্য ভারতীয় মিডিয়ায়