ঢাকা মহানগীর গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়ন ও বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০২৬ সালে শহরে ইলেকট্রিক বাস নামাতে চায় সরকার। প্রকল্প শুরু হওয়ার কথা রয়েছে চলতি বছরের জুলাই মাসে। শেষ হবে ২০৩০ সালের জুন মাসে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকের পর ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, ডিটিসিএ পরিচালক (পরিকল্পনা) ধ্রুব আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট’ নামে এ প্রকল্পের আওতায় শুরুতে ঢাকার তিনটি রুটে চালানো হবে এসব বাস। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুনে আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদনের কথা রয়েছে। আর আমাদের এখানে ডিপিপি অনুমোদন হতে জুন মাস। এরপর প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ করা হবে।’
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে ৩০০ মিলিয়ন দেবে। এরমধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিবেশ অধিদপ্তর ও ২০০ মিলিয়ন ডলার পাবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ডিটিসিএ ১৫০ মিলিয়ন এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপকক্ষ-বিআরটিএ পাবে ৫০ মিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, ‘বাসগুলো পরিচালনার জন্য নতুন কোম্পানি গঠন করে কেউ আসতে পারে, বিদ্যমান কোম্পানিগুলো পেতে পারে অথবা সরকার কোম্পানি গঠন করেও এসব বাস চালাতে পারে। এখনো অপারেশনাল প্ল্যান ঠিক হয়নি।’
বাসের রুট প্রসঙ্গে ডিটিসিএ পরিচালক বলেন, এখনও রুট নির্ধারণ করা হয়নি। রুট ঠিক করার জন্য সমীক্ষা হবে প্রকল্পের মধ্যেই। তবে গাজীপুর থেকে উত্তরা হয়ে বাসগুলো শহরের মধ্যে চলাচল করবে। বাসগুলোর আকার হবে লম্বা, সেজন্য কোন কোন রুটে এসব বাস চলতে পারে সেগুলো বাছাই করতে হবে। গাজীপুরে, উত্তরা থেকে দক্ষিণের দিকে যাবে, এটা নিশ্চিত।
গত বছরের মার্চে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত ‘ট্রান্সফরমিং ট্রান্সপোর্টেশন ২০২৩’ সম্মেলনে ঢাকার বাস্তবতায় আগামীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সহায়তা চেয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
এ প্রকল্পে গত বছরের নভেম্বরে অর্থায়ন করার কথা থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আটকে যায়।
ডিটিসিএ জানিয়েছে, এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা। এটি পরিবহন খাত থেকে নির্গমন হ্রাসের মাধ্যমে বায়ুর মান উন্নয়নে সহায়তা করবে এবং ঢাকা শহরে ফ্র্যাঞ্চাইজি-ভিত্তিক বাস পরিচালনা মডেলের মাধ্যমে গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনবে।
এছাড়া কোম্পানি-ভিত্তিক ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলের অধীনে বৈদ্যুতিক বাস (ই-বাস) চালু করা। ঢাকা শহরের যানজট হ্রাস, গণপরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বায়ুর গুণগত মান উন্নয়ন করা। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থা কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য ডিটিসিএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি, বেসরকারি সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য।
ডিটিসিএ বলছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে নগর বাস সেবা বা সিটি বাস সার্ভিস ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হবে। বিভিন্ন রুট ও অর্থায়নের উপর ভিত্তি করে ২৫০টি থেকে ৫০০টি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা, নতুন ৩-৪টি নতুন বাস ডিপো স্থাপন ও বিদ্যমান ডিপোর অবকাঠামো উন্নয়ন, বাস স্টপেজ নির্মাণ ও উন্নয়ন, ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম স্থাপন, কারিগরি সহায়তা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিটিসিএ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ডিটিসিএ এর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আকতার।
আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম, বাস মালিক সমিতির সদস্য, ঢাকা মহানগর পুলিশ, পরিকল্পনা কমিশন, নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞসহ অংশীজনেরা।
বিআরটিসি বাস বাড়ানোর দাবি যাত্রীদের
ঢাকায় গোলাপি বাস চলবে কাউন্টার পদ্ধতিতে