ঢাকা
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

আশঙ্কাজনক অবস্থায় মাগুরার সেই শিশু

আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটির অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বর্তমানে তাকে ভেন্টিলেটরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শিশুটির চিকিৎসার জন্য চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রি.জে. মো. আসাদুজ্জামান খান।অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় ওই শিশু। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মাগুরা শহরে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত হিটু মিয়াকে (৪০) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। অভিযুক্ত হিটু মিয়া সম্পর্কে ওই শিশুর বোনের শ্বশুর।

শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা তার চাচা অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাতিজি স্থানীয় একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিজ বাড়ি থেকে মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে বড় বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া তাকে একটি ঘরের মধ্যে নিয়ে নির্যাতন চালায়।

মাগুরায় ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুটির অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শনিবার (৮ মার্চ ) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শিশুটির শারীরিক অবস্থার তথ্য জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘শিশুটির অবস্থা ভেরি ক্রিটিক্যাল। তার গলার আঘাত খুবই মারাত্মক। তার যৌনাঙ্গেও আঘাত রয়েছে। গত রাত ৯টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।‘

শিশুটি এখনো অচেতন মাগুরা পৌর এলাকায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি তার মৃত্যুর খবরও ছড়ানো হচ্ছে। গতকাল  শনিবার সকাল ৮টায় শিশুটির বড় বোন জানিয়েছেন, সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি।এদিকে শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়ন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

রবিউল ইসলাম নয়ন বলেন, মাগুরার নির্যাতিত শিশুটির সব রকম চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার পরিবারের দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি। দরিদ্র শিশুটির পরিবার যেন কোনো অসহায়ত্ব বোধ না করে, সেদিকে তিনি আমাদের খেয়াল রাখতে বলেছেন।ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব বলেন, শিশুটিকে সুস্থ করে তুলতে যা যা প্রয়োজন, চিকিৎসকেরা সবই করছেন। সবার আগে শিশুটিকে সুস্থ করতে হবে। আর এ ঘটনায় দোষীরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায়, সেদিকে আমরা সবাইকে সজাগ থাকতে বলেছি।

এদিকে মাগুরায় শিশুটিকে নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে শনিবার দিনভর বিক্ষোভ মিছিল করার কথা রয়েছে।মাগুরার শিশুটির শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেছেন তিনি। ভেন্টিলেটর যন্ত্রের সাহায্যে তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে বলে জানানো হয়।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পাশবিক নির্যাতনের কারণে শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। তার গলার আঘাত গুরুতর।

শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এসব কথা বলেন। শিশুটির চিকিৎসায় গাইনি ও অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালের গাইনি বিভাগ থেকে তাকে শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।

মাগুরা শহরে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে আট বছরের ওই শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। গতকাল সকালে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শিশুটির মামাতো ভাই গণমাধ্যমকে বলেন, তার বোন এখনো অচেতন। তার জ্ঞান ফেরেনি। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তারা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখবেন।অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।পুলিশ ও ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে,  গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে আনা হয়। সেখান থেকে দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

শিশুটির পরিবারের সদস্যরা জানান, তাদের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায়। শিশুটি কয়েক দিন আগে তার বড় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে আসেন।ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে, শিশুটির গলায় একটা দাগ আছে। মনে হচ্ছে, কিছু দিয়ে চেপে ধরা হয়েছিল। শরীরের বেশ কিছু জায়গায় আঁচড় আছে। তার যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়েছে।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী গত শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তার পরিবারের সবাই ঢাকায়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেননি। তিনি জানান, শিশুটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তার দুলাভাই ও দুলাভাইয়ের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।এদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গত শুক্রবার  জুমার পর মাগুরা সদরে মহাসড়ক অবরোধ ও থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা। এ সময় থানার মূল ফটক ঘেরাও করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি তোলেন। পরে সেনাবাহিনী এসে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

NC
আরও পড়ুন