জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই ক্ষমতায় যেতে চাই, তবে সেটি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে। কোনো নিয়ন্ত্রিত উপায়ে ক্ষমতায় যেতে চাই না। জনগণ আমাদের ম্যান্ডেট দিলে, জনগণ যদি মনে করে আমরা যোগ্য, তাহলেই আমরা যেতে চাই।’
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ ‘আবু সাঈদকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়’ সাক্ষ্য দিতে এসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, ‘কোনো মিডিয়াকে, বুরোক্রেসিকে বা মিলিটারিকে নিয়ন্ত্রণ করে নয়, এবং পাশের দেশ ভারতের কনসেন্ট নিয়ে আমরা কোনো ক্ষমতায় যেতে চাই না।’
ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আসার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘তিনি মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরছিলেন। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কীভাবে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়, সেটিই বর্ণনা করেছেন। কীভাবে মিডিয়ার সামনে তাদের বক্তব্য বিকৃত করা হয় এবং ‘নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের’ মাধ্যমে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বক্তব্যের খণ্ডিতাংশ ও আংশিক প্রচার করে ‘আন্দোলন প্রত্যাহারের নাটক’ মঞ্চস্থ করেছিল, সে বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন।
হাসনাত বলেন, ১৪ জুলাই আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি এবং রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করার পর দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। এর প্রতিবাদে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর ‘নির্মমভাবে নির্যাতন ও নিপীড়ন’ চালায়। ১৬ জুলাই সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ মিছিলে রংপুরে আবু সাঈদকে ক্যাম্পাস কম্পাউন্ডে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং চট্টগ্রামে ছাত্রদলের ওয়াসিমকেও হত্যা করা হয়। সেদিন সারাদেশে মোট ছয়জন শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, ১৭ জুলাই গায়েবানা জানাজা দিতে গেলে এজেন্সির চাপ, বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগসাজশ এবং ইউজিসির নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। গায়েবানা জানাজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য সদস্য সমন্বিতভাবে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।
এরপর তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মিটিং করার জন্য চাপ দেওয়া হয়, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি বলেন, ব্যর্থ হয়ে সেদিন রাতেই আমাকে ‘সেফ হাউজে’ (মৎস্যভবন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাঝামাঝি) নিয়ে গিয়ে সারারাত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং চাপ প্রয়োগ করা হয়। সেদিন সকালে এসে এজেন্সির একজন আমাদের হুমকি দেয় যে আমরা যেন মিটিং করে সারাদেশের সমন্বয়কদের বলি যে আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। তাহলে আমাদের লাইফ সেটেল করে দেবে, বিদেশেও আমাদের লাইফ সেটেল করে দেবে।
এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, আমরা সেখানে বলেছিলাম রক্ত মাড়িয়ে কোনো সংলাপ নয়। শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা কোনো সংলাপ করতে পারি না। এবং আমরা বলেছিলাম শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কিন্তু কোনো গণমাধ্যম সেটি সেদিন প্রচার করেনি।
তিনি আরও বলেন, ডিজিএফআইয়ের একজন সদস্য নাম সম্ভবত হাসনাত; তিনি মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। আমাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করাতে চাপ দেন। কিন্তু আমি সংবাদমাধ্যমের সামনে শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করেন। পরে গণমাধ্যম তাদের বক্তব্য বিকৃত করে কেবল কিছু দাবি প্রচার করে, যেন তারা নাকি মিটিং করে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে।
হাসনাত বলেন, এসব ঘটনার পেছনে শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রীয় কাঠামো দায়ী। তিনি সামরিক বাহিনী, মিডিয়া এবং বিচার বিভাগ, এই তিন ব্যবস্থাকে আমলাতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন যে এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ জুলাই আন্দোলনের পক্ষে রাস্তায় নেমে এসেছিল। তাই অপরাধের বৈধতা উৎপাদনকারী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিপজ্জনক কতিপয় সদস্যের বিচার করে সেনাবাহিনীকে কলঙ্কমুক্ত করতে এবং তাদের মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হবে।
সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে হাসনাত আবদুল্লাহ
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেবেন হাসনাত