এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ করে এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা বলেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর আইনি জটিলতার কারণে ট্রাস্টি বোর্ড কব্জায় নিতে না পারলেও এর অধিকাংশ সম্পদ বর্তমানে দখলে রেখেছেন বিদিশা সিদ্দিক।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন এ অভিযোগ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ট্রাস্টের সদস্য কাজী মো. মামুনুর রশিদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর ও সদস্য খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু।
কাজী মো. মামুনুর রশিদ বলেন, জীবিত থাকা অবস্থায় এরশাদ ও তার গঠিত অধিভুক্ত ট্রাস্ট সম্পদে সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিককে কোনো অধিকার দেওয়া হয়নি। তবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর আইনি জটিলতার কারণে ট্রাস্টি বোর্ড কব্জায় নিতে না পারলেও এর অধিকাংশ সম্পদ বর্তমানে দখলে রেখেছেন বিদিশা সিদ্দিক। বিদিশা সিদ্দিক থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টকে মুক্ত করতে প্রশাসনসহ জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে ও সহযোগিতা কামনা করেছেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের সম্পত্তি জবর-দখলের চেষ্টার অভিযোগ তুলে ট্রাস্টের সদস্য কাজী মো. মামুনুর রশিদ বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এরশাদপুত্র এরিকের খরচ বাবদ প্রতি মাসে বনানীস্থ কুয়েত মৈত্রী মার্কেটে একটি দোকান, গুলশান ও বনানীতে দুইটি ফ্ল্যাট থেকে প্রাপ্ত ভাড়া প্রায় তিন লাখ বিশ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক এরিক এরশাদের ভরণ-পোষণের উসিলা দিয়ে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের অর্থ দাবি করে আসছেন আমাদের কাছে। বিদিশা সিদ্দিক এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছেন এরিক এরশাদকে। ইতোপূর্বে এরিকের একটি অডিও বার্তা ও লিখিত পত্র আমরা শুনেছি এবং দেখেছি। ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি এরিকের সেই অডিও বার্তা সংবাদ সম্মেলনে শুনানোও হয়েছিল। এরশাদ ও তার গঠিত অধিভুক্ত ট্রাস্ট সম্পদে সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিককে কোনো অধিকার দেননি।’
মামুনুর রশিদ বলেন, ‘২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল সম্পাদিত এক দলিলে ট্রাস্ট গঠন করে তার বিষয়-সম্পত্তির বড় অংশ সেখানে দান করেন এরশাদ। ট্রাস্টের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ছেলে শাহাতা জারাব এরিকের ভরণ-পোষণ ও জনহিতকর কাজে ব্যয় হবে সম্পত্তি থেকে অর্জিত আয়। ট্রাস্টের আয় ভোগ ও কর্মকাণ্ডে অংশীদার হতে পারবেন না বিদিশা। তিনি এমন দাবি করলে তা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু এরশাদের মৃত্যুর ৪ মাস পরই পুত্র এরিককে খাওয়ানোর কথা বলে বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কে ঢুকেন বিদিশা সিদ্দিক। ট্রাস্টের অসিয়ত না মেনেই নিকেতনে তার নিজস্ব ফ্ল্যাট থাকলে তিনি আর প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে বের হননি। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রেসিডেন্ট পার্কের পুরোনো সব কর্মচারীদের বিদায় করে দেন বিদিশা সিদ্দিক।’
মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কের ৭ হাজার ৪২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও পার্কিং, গুলশানের ৯৬ নম্বর সড়কের ৪/বি বাড়ির ২ হাজার ৭১ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বনানীতে আল নাহিয়ান ট্রাস্টের সংযুক্ত আরব আমিরাত মৈত্রী শপিং কমপ্লেক্সের এক হাজার ৬০ বর্গফুটের দোকান, রংপুরের ‘পল্লীনিবাস’, রংপুরের মিঠাপুকুরের ‘পল্লীবন্ধু কোল্ড স্টোরেজ, ১৫ কোটি ৯ লাখ টাকার স্থায়ী ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়, শেয়ার এবং পাঁচটি গাড়ি ট্রাস্টে দান করেন এরশাদ। বাকি সম্পদ স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং বড় ছেলে রাহগীর আল মাহী এরশাদ শাদকে দিয়ে গেছেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।’
মামুনুর রশিদ বলেন, ‘২০২২ সালের ১৪ আগস্টের পর থেকে এরশাদের রেখে যাওয়া ব্যাংক থেকে আমরা কোনো অর্থ উত্তোলন করিনি। দুটি ব্যাংকে প্রায় তিন কোটি টাকা ইতোমধ্যে মূল টাকায় যোগ হয়েছে। এ ছাড়া অসিয়তনামায় বিভিন্ন জনহিতকর কাজ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা বলা হলেও তা আমি নিজ অর্থায়নে করেছি। এরশাদের রেখে যাওয়া একটি টাকাও উত্তোলন করিনি। এরিকের ভরণ-পোষণের জন্য শুধুমাত্র একটি ব্যাংক থেকে কিছু লভ্যাংশ উত্তোলন করা হয়েছে। আমরা ব্যাংকে চিঠি দিয়ে লেনদেন বন্ধ রেখেছি। যাতে অবৈধভাবে কেউ অর্থ উত্তোলন করতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক দখলের মাধ্যমে এরশাদের রেখে যাওয়া অর্থের জন্য আমাদের একের পর এক বিদিশা সিদ্দিক ও তার নিযুক্ত কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে দেখভালের নাম করে ট্রাস্টকৃত সম্পদে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জোরপূর্বক বসবাস করছেন। এরপর থেকেই প্রেসিডেন্ট পার্কে শুরু হয়েছে অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সমাজের উঁচু তলার এক শ্রেণির ক্ষমতালোভী ব্যক্তিদের নিয়ে বিদিশা খুলে বসেন মদের জলসা। প্রেসিডেন্ট পার্কে প্রতি রাতেই চলে অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড। কখনো কখনো এসব অপকর্মে জোরপূর্বক এরশাদপুত্র এরিককেও জড়ানোর চেষ্টা করা হয়। এসব আড্ডার ভিডিও ধারণ ও প্রকাশ করেন বিদিশা সিদ্দিক। ভিডিও ধারণের উদ্দেশ্য হচ্ছে তার অপকর্মে জড়িয়ে যাওয়া মানুষগুলো যেন কখনো তার বিপক্ষে অবস্থান নিতে না পারেন।’
মামুনুর রশিদ বলেন, ‘এসব ভিডিও দেখিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে থাকেন বিদিশা সিদ্দিক। কেউ তার কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করলে তাকে এসব ভিডিও দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে থাকেন তিনি। এরূপ পরিস্থিতি থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টকে মুক্ত করতে প্রশাসনসহ জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে ও সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
মামুনুর রশিদ বলেন, ট্রাস্টের পুনর্গঠনের স্বার্থে আমি ট্রাস্টের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমরা চাই, এই হস্তক্ষেপ, জবরদখল বন্ধ হোক। ট্রাস্ট নিয়মমাফিক চলুক। পারিবারিকভাবে এটার সুরাহা হোক।
