ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

অভ্যুত্থানের ফসল কি শুধু বাঙালিরাই পাবেন, সমাবেশে প্রশ্ন আদিবাসীদের

‘সংস্কার কমিশনগুলোতে ডজন ডজন কাগজ খরচ করে প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে, অথচ সেখানে আমার ম্রো ভাইদের কথা নেই, সেখানে আদিবাসীদের কথা নেই।’ 

আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৮ পিএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফসল কি শুধুমাত্র সংখ্যাগুরু বাঙালিরাই পাবেন, আর ভিন্ন ভাষাভাষী সংখ্যালঘু জাতিসমূহ এর সুফল থেকে বঞ্চিত থাকবে কি না, এমন প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন ‘ঢাকাস্থ আদিবাসী ছাত্র-যুব সংগঠনসমূহ’। 

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এ কথা বলেন। পাহাড়ি নেতা রিং রং ম্রো’র মুক্তি ও ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারের দাবিতে  এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। 

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপায়ন খীসা অভিযোগ করেন, ‘২০২২ সালে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পর আমরা বাচ্চাদের জন্য পাঠশালা স্থাপন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে সেই এলাকায় যেতে দেওয়া হয় নি। বরঞ্চ পুলিশ বলেছে, আমরা নাকি অবৈধ জায়গায় স্কুল স্থাপনের চেষ্টা করছি।’

তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ফসল কি শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিরাই পাবে? আদিবাসীরা কি সেই ফসল থেকে আজীবন বঞ্চিত থাকবে?’

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘সংস্কার কমিশনগুলোতে ডজন ডজন কাগজ খরচ করে প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে, অথচ সেখানে আমার ম্রো ভাইদের কথা নেই, সেখানে আদিবাসীদের কথা নেই।’

ম্রো স্টুডেন্টস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে পায়া ম্রো বলেন, ‘বহু বছর ধরে রাষ্ট্র কখনও নিজে, কখনও বা তার মদদপুষ্ট কর্তৃপক্ষ আদিবাসীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে প্রান্তিকতার খাদে ঠেলে দিচ্ছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ভূমি রক্ষা কমিটির নেতা রিং রং ম্রোকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা।’

হিল উইমেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘সিভিল ড্রেসে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। অথচ তারই বাহিনী কালকে রিং রং ম্রোকে গ্রেপ্তারের ওয়ারেন্ট না দেখিয়ে সিভিল ড্রেসে গ্রেপ্তার করেছে। কোথায় গেল সেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা?’

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈসানু মারমা বলেন, ‘রিং রং ম্রোকে গ্রেপ্তার কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসীদের উপর চলমান অপ্রকাশিত নিপীড়নের বহিঃপ্রকাশ।’

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আদিবাসীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন যদি সরকার মেনে না নেয়, তাহলে হয়ত পাহাড়ে কোন একদিন অস্ত্রের ঝনঝনানি বেজে উঠবে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যোগসাজশে স্থানীয় আদিবাসীদের পূর্বপুরুষদের ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। 

অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কুর্নিকোভা চাকমা, সুর্মী চাকমা ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মনতুষ চাকমা।

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে ১৯৯৬ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক রাবার চাষের জন্য লিজ দেয়া হয়। লিজ নেওয়ার পর থেকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখল, ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে হুমকি ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

২০২৩ সালে এই কোম্পানির বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের একমাত্র পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠে। 

Fj
আরও পড়ুন