জুমার দিন ইসলামি জীবনব্যবস্থার এক মহিমান্বিত দিন। এটি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন, রহমত, মাগফিরাত ও বরকতের দিন। এই দিনকে কেন্দ্র করে কোরআন ও হাদিসে বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা ঘোষণা করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন—‘হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনের নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ কর।’ (সুরা জুমুয়া, আয়াত : ৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— ‘আল্লাহর নিকট সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমা।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)
এই মহামূল্যবান দিনের রয়েছে কিছু বিশেষ আমল, যা মুসলমানের ঈমান, আত্মিক পবিত্রতা ও সামাজিক ঐক্যকে সমুন্নত করে।
নিচে সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো—
১) গোসল, সুগন্ধি ও পরিষ্কার পোশাক পরিধান
জুমার দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ হলো গোসল করা, সুন্দর পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—‘প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য জুমার দিনের গোসল করা অপরিহার্য।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৭৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৪৬)
আরেক হাদিসে এসেছে—‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, সুগন্ধি ব্যবহার করে, মসজিদে যায় এবং ইমাম খুতবা দেয়ার সময় মনোযোগ সহকারে শোনে—তার গত জুমা থেকে এ জুমা পর্যন্ত গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘এ হাদিস প্রমাণ করে যে, জুমার গোসল ও পরিচ্ছন্নতা শুধু শরীর নয়, আত্মিক প্রস্তুতিরও প্রতীক।’ (শরহ সহিহ মুসলিম, নববী)
২) সূরা কাহফ তেলাওয়াত
জুমার দিনের একটি বিশেষ আমল হলো সূরা কাহফ পাঠ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ পাঠ করে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত আলো বিকিরিত হয়।’
(আল-হাকিম, মুস্তাদরাক, হাদিস: ৩৩৯২)
ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘সূরা কাহাফে দুনিয়াবি ফিতনা, দাজ্জালের পরীক্ষা ও ঈমান রক্ষার উপদেশ রয়েছে; তাই জুমার দিনে এর পাঠ মুমিনের অন্তরে আলোর সঞ্চার ঘটায়।’ (যাদুল মা‘আদ, খণ্ড ১, পৃ. ৩৭৫)
৩) দুরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— ‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমা; তাই এদিন আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ তোমাদের দরুদ আমার নিকট উপস্থাপিত হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১; নাসাঈ, হাদিস: ১৩৭৪)
ইমাম শাওকানী (রহ.) বলেন, ‘দরুদ পাঠের মাধ্যমে বান্দা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক নবায়ন করে এবং আল্লাহর রহমত লাভ করে।’ (নাইলুল আওতার, ৩/৩৪৫)
৪) দোয়া কবুলের বিশেষ সময় অনুসন্ধান
জুমার দিনে একটি বিশেষ সময় রয়েছে, যখন দোয়া কবুল হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন— ‘জুমার দিনে এমন এক সময় আছে, যে মুহূর্তে কোনো মুসলমান দোয়া করলে তা অবশ্যই কবুল হয়।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫২)
বেশিরভাগ সাহাবি ও তাবেয়িন যেমন ইবনে আব্বাস (রা.), ইমাম আহমদ (রহ.) প্রমুখ বলেন—এই সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। (ফাতহুল বারী, ২/৪১৬)
৫) জুমার নামাজে অগ্রাধিকার
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন— ‘অতঃপর যখন নামাজ সম্পন্ন হবে, তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করো।’ (সুরা আল-জুমা, আয়াত : ১০)
রাসুল (সা.) সতর্ক করেছেন— ‘কিছু লোক যদি জুমার নামাজ পরিত্যাগ করা বন্ধ না করে, তবে আল্লাহ তাদের অন্তর মুদি করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৬৫)
৬) মসজিদে আগে গমন ও খুতবা মনোযোগে শোনা
হাদিসে এসেছে—‘যে ব্যক্তি জুমার প্রথম ঘন্টায় যায়, সে উট কোরবানি করার সমান সওয়াব পায়; আর পঞ্চম ঘন্টায় গেলে ডিম দানের সমান।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮১)
ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন আগে গিয়ে খুতবা শোনে, সে জান্নাতের বাগানে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নেয়।’ (মাওয়াত্তা মালেক, হাদিস: ২৫৬)
জুমার দিন শুধু সাপ্তাহিক ছুটি নয়; এটি এক মহা আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণের দিন। এই দিনে বান্দা নিজের ঈমান নবায়ন করে, সমাজিক বন্ধন দৃঢ় করে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— ‘যে ব্যক্তি অবহেলার কারণে তিনটি জুমা ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তার অন্তরে সীল মেরে দেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২; তিরমিজি, হাদিস: ৫০০)
জীবনে পরিবর্তন দরকার, ৫টি হাদিসের আমল করুন