ঢাকা
সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

অমুসলিমের হক নষ্টের পরিণতি 

আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৮ এএম

ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যেখানে ন্যায় ও মানবতার মর্যাদা সবকিছুর ওপরে। মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম—সবার হক রক্ষা করার ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত কঠোর। আল্লাহ তাআলা দয়া করেন, ক্ষমা করেন কিন্তু মানুষের ওপর করা অন্যায়ের বিচার তিনি নিজ দায়িত্বে নেন না; ওই ব্যক্তিকেই হকের প্রতিদান দেওয়া হবে। তাই দুনিয়াতে যাকে ছোট মনে হয়—অবিচার হলেও তা আল্লাহর দরবারে পাহাড়সম ওজন নিয়ে হাজির হবে।

এ কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম নেয়— ‘কোনো মুসলমান জীবিত অবস্থায় কোনো কাফেরের হক নষ্ট করলে এবং তা পরিশোধ না করেই মারা গেলে, কেয়ামতের দিন সেই কাফের কীভাবে তার হক আদায় পাবে?’

ইসলাম স্পষ্টভাবে বলে—হক নষ্ট করা কেয়ামতের বড় শাস্তির কারণ। মুসলমান হোক কিংবা অমুসলিম, কারো ক্ষতি করলে কেয়ামতের দিন তার প্রতিদান নিতেই হবে। 

এ প্রসঙ্গে কুরআনের দলিল— ‘তোমার প্রভু কাউকে সামান্যতমও জুলুম করেন না।’ (সুরা কাহাফ: আয়াত ৪৯)

এই আয়াত প্রমাণ করে— আল্লাহ কারও হক নষ্ট হতে দেন না; অমুসলিম হলেও তার ন্যায্য প্রাপ্য তাকে দেওয়া হবে।

হাদিসের দলিল

কেয়ামতের দিন অন্যায়কারীর পক্ষ থেকে প্রতিদান আদায় হবে। এ বিষয়টি হাদিসে পাকে এভাবে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে—

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— ‘কেয়ামতের দিন হকদারদের হক আদায় করা হবে, এমনকি যে বকরির শিং নেই, তার জন্য শিংওয়ালা বকরি থেকে বিনিময় আদায় করে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম ২৫৮২, তিরমিজি ২৪২০, তারগীব ৩৬০৩, আদাবুল মুফরাদ ১৩৬, মুসনাদে আহমাদ ৭২০৪, ইবনু হিব্বান ৭৩৬৩, বায়হাকি ১১৮৩৯, মিশকাত ৫১২৮)

হাদিসটি সাধারণ; এখানে মুসলমান বা কাফের আলাদা করা হয়নি। অর্থাৎ কার হক নষ্ট হয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়—হক তো হকই।

হকের প্রতিদান নেওয়ার পদ্ধতি

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তা তার কাছ থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি ২৪৪৯)

এখানে কোনো মুসলমান–অমুসলিম পার্থক্য নেই। তাই কাফেরের হক নষ্ট করলেও একই বিচার হবে।

সুতরাং যে মুসলমান কাফেরের হক মেরে দিলো এবং দুনিয়াতে তা পরিশোধ না করেই মারা গেল— কেয়ামতের ময়দানে তার নেক আমল থেকে সেই কাফেরকে প্রতিদান দেওয়া হবে। যদি নেক আমল না থাকে, তবে কাফেরের গুনাহ তার (মুসলমানের) ওপর চাপানো হবে। আল্লাহ ন্যায়বিচার করবেন এবং কারও কোনো হক নষ্ট হতে দেবেন না।

ইসলামে ন্যায়বিচার এমন এক মৌলিক মূল্যবোধ, যা মুসলিম–অমুসলিম সবার জন্য সমান। মানুষের হক নষ্ট করার পরিণাম খুব ভয়াবহ—কবর, হিসাব, দোজখ—সবকিছুই এর সঙ্গে জড়িত হতে পারে। তাই দুনিয়াতেই যার হক আছে, তাকে ফিরিয়ে দেওয়া শ্রেয়; মৃত্যু এসে গেলে আর সুযোগ থাকে না। অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত—সবার হক আদায় করা, কারও প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার না করা, কারণ আল্লাহর দরবারে কারও কোনো হক নষ্ট হয় না।

HN