ঢাকা
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

হজের আগে যে আমলগুলো করবেন

আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম

হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন ও ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)

হজের সফর একটি ইবাদাত-ভিত্তিক প্রশিক্ষণযাত্রা। এই সফরের প্রতিটি ধাপে রয়েছে আত্মশুদ্ধির সুযোগ।কারণ হজের পূর্ববর্তী সময়টা ইবাদত শিখা ও প্রস্তুতির সুবর্ণ সুযোগ। হজের আগে মক্কায় অবস্থানকালে হাজিদের জন্য যে আমলগুলো করা আবাশ্যক:

১. নিয়ত বিশুদ্ধ করা ও হিদায়াত কামনা করা

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ তাদের একমাত্র নির্দেশ ছিল একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করা। (সুরা আল-বাইয়্যিনাহ: ৫)

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ নিশ্চয়ই সকল আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।  (বুখারি: ১) বুঝা যায় হজের পূর্বে হাজি সাহেবদের উচিত হৃদয় শুদ্ধ করা, সকল রিয়া (লোক দেখানো) বা দুনিয়াবি স্বার্থ বাদ দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নিয়ত করা।

২. হজের মাসায়েল জানা ও শিখা

فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ তোমরা যদি না জানো, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করো। (সুরা নাহল: ৪৩) হাজিদের উচিত মক্কায় যাওয়ার পর তাদের সাথে থাকা মুআল্লিমিনদের থেকে হজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো শিখে নেয়া।

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

যে ব্যক্তি এমনভাবে হজ করে যাতে অশ্লীল কথা ও গুনাহে লিপ্ত হয় না, সে নবজাতকের মতো পাপমুক্ত হয়ে ফিরে আসে। (বুখারি: ১৫২১) এমন হজ করতে হলে শুদ্ধ জ্ঞান অপরিহার্য।

৩. মসজিদে হারামে অধিক পরিমাণে নামাজ আদায় করা
 
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ، إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ، وَصَلَاةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِائَةِ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ.
 
জাবির রা. হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববি) একটি নামাজ অন্যান্য সব মসজিদের চেয়ে এক হাজার গুণ উত্তম, তবে মসজিদুল হারাম ব্যতীত। আর মসজিদুল হারামে একটি নামাজ অন্য যেকোনো স্থানের এক লক্ষ নামাজের চেয়ে উত্তম। (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ১৪০৬)

এই সুযোগ কখনও ফিরে নাও আসতে পারে। তাই হাজি সাহেবদের উচিত নিয়মিত জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা এবং সুন্নত, নফল নামাজে মনোযোগী হওয়া।
 
৪. অধিকহারে তাওয়াফ করা

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ:مَنْ طَافَ بِهَذَا الْبَيْتِ أُسْبُوعًا فَأَحْصَاهُ، كَانَ كَعِتْقِ رَقَبَةٍ، لَا يَضَعُ قَدَمًا، وَلَا يَرْفَعُ أُخْرَى، إِلَّا حَطَّ اللَّهُ عَنْهُ خَطِيئَةً، وَكَتَبَ لَهُ بِهَا حَسَنَةً.
 
আবদুল্লাহ ইবন উমর রা.বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
 
যে ব্যক্তি এই ঘর (কাবা) এর তাওয়াফ পূর্ণ সাত চক্কর দিল এবং তা পূর্ণ গণনা করল, তার জন্য একজন দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব রয়েছে। সে যত পা রাখে বা তোলে, প্রতিটি পায়ে আল্লাহ তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন এবং একটি নেকি লিখে দেন। (তিরমিজি: ৯৫৭

হজের পূর্বে তাওয়াফের মাধ্যমে ইবাদতের চর্চা ও আত্মার প্রশান্তি অর্জিত হয়।

৫. জমজম পানি পান ও দোয়া করা

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ জমজম এমন একটি পানি, যা যেই নিয়তে পান করা হয়, সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়। (ইবনু মাজাহ: ৩০৬২) হজের আগে নিয়ত, ইখলাস, পাপমুক্তি, দুঃখ মোচন ইত্যাদি উদ্দেশ্যে দুআর সঙ্গে জমজম পান করা উচিত।

৬. কুরআন তিলাওয়াতে সময় ব্যয় করা 

হজের সময় বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করলে অনেক সওয়াব হয়।

৭. অধিক পরিমাণে জিকির, ইস্তিগফার ও কান্নাকাটি

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি করে স্মরণ করো। (সুরা আহজাব: ৪১) রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হজ্জ হল, জিকির ও তাকওয়ার সফর। (সহিহ অর্থে এই মর্ম পাওয়া যায়: মুসলিম: ১২৮৪)

৮. হারামের আদব বজায় রাখা

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ যে ব্যক্তি এই ঘরে (মসজিদুল হারামে) অন্যায় ইচ্ছাও পোষণ করবে, আমরা তাকে কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাবো। (সুরা হাজ্জ: ২৫) তাই ঝগড়া, উচ্চস্বরে কথা বলা, হাসাহাসি, অন্যকে কষ্ট দেয়া, গিবত ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা ফরজ আদব।

৯. মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হাজির দুআ প্রত্যাখ্যান করা হয় না যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। (ইবনু মাজাহ: ২৮৯৫) নিজ, পরিবার, জাতি, দেশ, মুসলিম উম্মাহ, উলামায়ে কেরাম, দ্বীনি প্রতিষ্ঠান,সবকিছুর জন্য দআ করা উত্তম।

১০. গুনাহ থেকে তাওবা ও হালাল জীবনে প্রত্যাবর্তনের সংকল্প

মক্কায় হজের পূর্বে নিজের অতীত জীবনের গুনাহ স্মরণ করে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাওয়া এবং হালাল ও তাকওয়াভিত্তিক জীবনের সংকল্প করা একজন হাজির অন্যতম প্রধান করণীয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন। (সুরা বাকারা: ২২২)

হজের পূর্ববর্তী সময়টি একটি প্রশিক্ষণের সময়। এই সময়টুকুকে ইবাদত, শিক্ষা, আত্মশুদ্ধি, প্রস্তুতি ও আল্লাহর ঘনিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে সাজাতে পারলে হজ হবে আরও পরিপূর্ণ ও কবুলযোগ্য। 

AA/AHA
আরও পড়ুন