ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ

জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং কুসংস্কারের বিতর্ক

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম

সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ, দুটি মহাজাগতিক ঘটনা যা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষকে মুগ্ধ করে আসছে। একদিকে যেমন এই ঘটনাগুলো জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গবেষণার অপার সুযোগ করে দেয়, অন্যদিকে তেমনই যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এগুলিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা কুসংস্কার ও বিশ্বাস। প্রশ্ন হলো, এই গ্রহণগুলো কি সত্যিই মানুষের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে?

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একমত যে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি কোনো বৈজ্ঞানিক প্রভাব নেই। এগুলি চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবীর কক্ষপথের নির্দিষ্ট অবস্থানের কারণে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক ঘটনা। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সামান্য তারতম্য ছাড়া পৃথিবীর উপর এর কোনো বড় ধরনের ভৌত প্রভাব পড়ে না।

তবে, গ্রহণের সময় সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকালে রেটিনার ক্ষতি হতে পারে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এই কারণে গ্রহণ দেখার জন্য বিশেষ চশমা বা ফিল্টার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

প্রাচীন বিশ্বাস ও কুসংস্কার

প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রহণকে ঘিরে নানা ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত আছে। কিছু সংস্কৃতিতে গ্রহণকে অশুভ মনে করা হয়, আবার কিছু সংস্কৃতিতে এটিকে পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

স্বাস্থ্যগত প্রভাব: অনেক সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয় যে গ্রহণের সময় গর্ভবতী নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি শিশুর স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

খাদ্য ও পানীয়: কিছু অঞ্চলে গ্রহণের সময় খাবার গ্রহণ বা জল পান করা থেকে বিরত থাকার প্রথা আছে। বিশ্বাস করা হয় যে গ্রহণের সময় খাবার দূষিত হয়ে যায়।

ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ: জ্যোতিষশাস্ত্রে গ্রহণকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হয়। মনে করা হয় যে এটি রাশিচক্রের উপর প্রভাব ফেলে এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।

মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

গ্রহণ মানুষের মনে এক ধরনের কৌতূহল এবং বিস্ময় তৈরি করে। এই মহাজাগতিক ঘটনা দেখে অনেকে অভিভূত হন। আবার যারা কুসংস্কারে বিশ্বাসী, তাদের মনে উদ্বেগ বা ভয় সৃষ্টি হতে পারে। এই মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব মানুষের আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে, তবে এটি গ্রহণের কোনো ভৌত প্রভাব নয়।

আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের মানুষের জীবনে সরাসরি কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই, যদি না কেউ খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকায়। তবে, প্রাচীন বিশ্বাস এবং কুসংস্কারগুলো আজও সমাজে বিদ্যমান, যা মানুষের মনস্তত্ত্ব এবং আচরণকে প্রভাবিত করে। গ্রহণকে ঘিরে বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের এই বিতর্ক সম্ভবত ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে

DR/AHA
আরও পড়ুন