আর মাত্র তিন দিন। ওয়াশিংটন ডিসিতে ৫ ডিসেম্বর হবে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ ড্র। তারপরই ভক্ত-সমর্থকরা নিজ নিজ দেশের শিরোপা জয়ের সম্ভাব্য পথ কিছুটা বুঝতে পারবেন।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর ১৬টি ভেন্যু জুড়ে হবে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আসর। দল ৩২ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৮টি এবং ম্যাচের সংখ্যা ৬৪ থেকে ১০৪ এ উঠেছে। টুর্নামেন্টের ছয়টি দল এখনো চূড়ান্ত হয়নি, উয়েফঅ প্লে অফ থেকে চারটি এবং বাকি দুটি দল টিকিট পাবে আন্তঃকনফেডারেশন প্লে অফ খেলে।
তবে বিশ্বকাপের ফেভারিট দলগুলোর জায়গা নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। ১৯৬২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে আর্জেন্টিনাকে টানা দুটি বিশ্বকাপ জেতাতে চাইবেন লিওনেল মেসি। ২০২২ সালের রানার্সআপ ফ্রান্স ও বর্তমান ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন স্পেনের সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে তাদের।
ইংল্যান্ড ও ব্রাজিল থমাস টুখেল ও কার্লো আনচেলত্তির ওপর ভর করে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকেও ফেলে দেওয়া যায় না। স্বাগতিকরাও নিজেদের প্রমাণ করতে চাইবে। আর ম্যানসিটি গোলমেশিন আর্লিং হালান্ডের নেতৃত্বে নরওয়েও চমক দেখাতে প্রস্তুত।
এই সপ্তাহের ড্র সামনে রেখে অপটা সুপার কম্পিউটার বিশ্বকাপ নিয়ে প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। তাদের হিসাবনিকাশে কোন দলের ট্রফি জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু, দেখে নেওয়া যাক-

স্পেন: ১৭%
২০২৪ ইউরোতে লুইস দে লা ফুয়েন্তের স্পেন সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাসে চোখ ধাঁধানো পারফর্ম করেছে। লা রোহারা তাদের সাত ম্যাচের ছয়টিই জিতেছে ৯০ মিনিটের মধ্যে। কেবল এক ম্যাচে এক্সট্রা টাইমে খেলতে হয়েছে তাদের। কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচে জার্মানিকে বিদায় করে তারা। ওই টুর্নামেন্টে ১৫ গোল করেছিল তারা, যে কোনো দলের চেয়ে চারটি বেশি।
তারপর থেকে স্পেন চলছে অদম্য গতিতে। শেষ ৩১ ম্যাচে তারা অপরাজিত, জিতেছে ২৫টি, ড্র ৬ ম্যাছে। ভিনসেন্ত দেল বস্কের অধীনে ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩০ ম্যাচ অজেয় থাকার রেকর্ড ভেঙেছে তারা। ওই সময়ের মধ্যে স্পেন বিশ্বকাপ ও ইউরো জিতেছিল।
মার্চে পরের আন্তর্জাতিক বিরতি রয়েছে। তাতে স্পেন তিন বছর ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে অজেয় থাকবে। তাদের শেষ হার ছিল ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ স্কটল্যান্ডের মাটিতে। ইউরো বাছাইয়ে ২-০ গোলে হেরেছিল তারা।
তাই সুপার কম্পিউটারের চোখে স্পেন যে ফেভারিট হিসেবে বিশ্বকাপে নামবে, তা আশ্চর্যের কিছু নয়। তাদের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ১৭ শতাংশ।
স্পেন যদি শিরোপা জেতে, তাহলে লামিনে ইয়ামালের ভূমিকা থাকবে গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ ইউরো জয় এসেছিল এই তারকার ১৭তম জন্মদিনের পরের দিন। বিশ্বকাপ কিংবা ইউরো ফাইনালে খেলা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে তিনি পেছনে ফেলেন পেলেকে (১৯৫৮, ১৭ বছর ২৪৯ দিন)। ইউরো জয়ের পথে ১৯টি সুযোগ তৈরি করেছিলেন ইয়ামাল।
স্পেন বেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে রদ্রিকে। এই মিডফিল্ডার গত বছর লিগামেন্টের গুরুতর ইনজুরির পর ম্যানসিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগে মাত্র ২৯৪ মিনিট খেলেছেন। ২০২৫-২৬ মৌসুমটা ইনজুরিতে ম্লান হচ্ছে পেদ্রি ও গাভির। বার্সেলোনা এই দুই তারকার ফিটনেস ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় স্পেন।
স্পেনের মূল খেলোয়াড়রা যদি শতভাগ ফিটনেস নিয়ে খেলে, তাহলে ২০০৮ ও ২০১০ সালের মতো ইউরোর পর বিশ্বকাপও তারা জিততে পারে।

ফ্রান্স: ১৪.১%
ফ্রান্স ফুটবলের একটি অধ্যায়ের শেষ হতে যাচ্ছে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে। এই টুর্নামেন্টের পর লু ব্লুসের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন প্রধান কোচ দিদিয়ের দেশম। শেষবেলায় ফ্রান্সের শ্রেষ্ঠ কোচ হিসেবে নিজের জায়গা পাকা করতে চাইবেন তিনি।
দেশমের অধীনে ফ্রান্স খেলেছে ১৭৫ ম্যাচ। তারা যদি প্রথম নকআউট রাউন্ড পর্যন্ত পৌঁছায়, তাহলে তিনি ফ্রান্সের পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদী কোচ (রেমন্ড ডমেনেখ, ৭৯) সঙ্গে ১০০ ম্যাচের ব্যবধান বাড়াবেন।
কাতারে আগের আসরে আর্জেন্টিনার কাছে পেনাল্টি শুটআউটে ফ্রান্সের হার দেখেন দেশম। আবার তিনি সুযোগ পাচ্ছেন ভিত্তোরিও পোজ্জোর (১৯৩৪ ও ১৯৩৮) পর দ্বিতীয় কোচ হিসেবে একাধিক বিশ্বকাপ জেতার। ১৯৯৮ সালে অধিনায়ক হিসেবে দেশম ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিলেন। আর ফ্রান্সের অধিনায়ক হিসেবে কিলিয়ান এমবাপের এটাই হতে যাচ্ছে প্রথম বিশ্বকাপ। ব্যক্তিগত ও দলগত রেকর্ডে চোখ থাকবে রিয়াল মাদ্রিদ তারকার।
ফ্রান্সের হয়ে রেকর্ড ৫৭ গোল করা অলিভিয়ের জিরুদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন এমবাপে। ৯৩ ম্যাচে তার গোল ৫৫টি। বিশ্বকাপের আগেই এই রেকর্ড ভাঙার সুযোগ থাকছে। এছাড়া বিশ্বকাপে সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতা মিরোস্লাভ ক্লোসার (১৬) পেছনে ছুটবেন এমবাপে, দুই আসরেই তার গোল ১২টি (২০১৮ সালে চার, ২০২২ সালে ৮)।
মেসি (১৩) এমবাপের চেয়ে এক গোলে এগিয়ে। টুর্নামেন্টের শেষ পর্যন্ত দুই তারকার লড়াই আগ্রহ বাড়াচ্ছে।
এমবাপে ছাড়াও ফ্রান্স দলকে আশাবাদী করে তুলছে এই বছরের ব্যালন ডি’অর জয়ী উসমান দেম্বেলে। প্যারিস সেন্ট জার্মেইকে যিনি প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতান। সেন্ট্রাল অ্যাটাকার হিসেবে গত মৌসুমে ৩৩ গোল ও ১৩ অ্যাসিস্ট ছিল তার।
একই আক্রমণভাগে এমবাপে ও দেম্বেলেকে কীভাবে খেলাবেন দেশম, সেই উপায় খুঁজতে সমস্যার মুখে পড়তে পারেন তিনি।
১৪.১ শতাংশ সম্ভাবনা নিয়ে ফ্রান্স সুপার কম্পিউটারের দ্বিতীয় ফেভারিট। জুনে উয়েফা নেশনস লিগের সেমিফাইনালে তারা স্পেনের কাছে ৫-৪ গোলে হেরেছিল।
ইংল্যান্ড: ১১.৮%
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে মেজর টুর্নামেন্টে ৬০ বছরের ট্রফি খরা ঘুচাতে চায় ইংল্যান্ড। থমাস টুখেলের অধীনে থ্রি লায়নরা প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে। ট্রফি জয়ে তাদের সম্ভাবনা ১১.৮ শতাংশ। গ্যারেথ সাউথগেটের অধীনে তারা দুইবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে খেলেও শিরোপা বঞ্চিত হয়।
টুখেলের কাজ সহজ। কাছে গিয়েও ব্যর্থ হওয়ার গেরোটা কাটানো। মার্সেলো লিপ্পি ও দেল বস্কের পর তৃতীয় কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি তার সামনে।
টুখেলের ইংল্যান্ডের জিততে একটু ঘাম ছুটছে। আলবেনিয়া (৩-০), লাটভিয়া (২-০), অ্যান্ডোরাকে (১-০ ও ২-০) হারিয়েছিল তারা, তবে জুনের প্রীতি ম্যাচে সেনেগালের কাছে ৩-১ গোলে হারতে হয় থ্রি লায়নদের। যদিও সেপ্টেম্বরে সার্বিয়ার বিপক্ষে ৫-০ গোলের জয় তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
বাছাইপর্বে তো দুর্দান্ত ছিল ইংল্যান্ড। ‘কে’ গ্রুপে আট জয় পেয়েছে তারা কোনো গোল না খেয়ে। ১৯৫৪ সালে যুগোস্লাভিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে উয়েফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সবগুলো ম্যাচ জিতেছে থারা।
ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জয়ের আশার আলো দেখাচ্ছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা হ্যারি কেইন। আগস্টে মৌসুম শুরুর পর থেকে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ২০ ম্যাচে ২৪ গোল তার। ইংল্যান্ড অধিনায়কের কারণে জুড বেলিংহাম ও ফিল ফডেনের একসঙ্গে শুরু করা হয়তো হবে না। ইনজুরি কাটিয়ে কোল পালমার শতভাগ ফিটনেস ফিরে পাবেন, সেই আশায় টুখেল। তারকাদের ভিড়ে এবেরেচি এজে ও মর্গান রজার্সের মতো তরুণদের কাছ থেকে ভালো কিছু দেখা যেতে পারে।ৎ

আর্জেন্টিনা: ৮.৭%
আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মতে, ২০২২ বিশ্বকাপের আগে ডিয়েগো ম্যারাডোনার ছায়া থেকে বের হতে পারেননি লিওনেল মেসি। দলকে তৃতীয় বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার পথে ব্যক্তিগত একাধিক রেকর্ড গড়েছেন তিনি। আটবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী সাত গোল ও তিন অ্যাসিস্ট করেন। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক আসরে গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে গোল করেন তিনি।
শট (৩২), ওপেন প্লে থেকে সুযোগ তৈরি (১৭), ফাউল জেতার (২২) হিসাবেও কাতারে সবার উপরে ছিলেন মেসি। এক আসরে এই তিন ক্ষেত্রেই সবার উপরে থাকা দ্বিতীয় খেলোয়াড় তিনি, তার আগে ১৯৮৬ সালে এই কীর্তি গড়েন ম্যারাডোনা।
এখন মেসির সামনে সুযোগ ম্যারাডোনা যা করতে পারেননি, সেটা করে দেখানো- দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়। মেসির মধ্যে থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই বছর এমএলএসে ৩৫ গোল ও ২১ অ্যাসিস্টে ইন্টার মায়ামিকে তুলেছেন মেজর লিগ সকার কাপ ফাইনালে।
এরই মধ্যে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা (২৬) ও গোল সংক্রান্ত সম্পৃক্ততায় (২১) সবার উপরে মেসি। এখন তার চোখ ক্লোসার গোল রেকর্ড ভাঙার দিকে, সেখানে ঠিক এক গোল পেছনে এমবাপে (১২)।
কনমেবল বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আর্জেন্টিনা দাপট দেখিয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইকুয়েডরের চেয়ে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে শীর্ষে ছিল তারা। ১৯৯৩ সালের পর প্রথমবার গত বছর টানা কোপা আমেরিকা জিতেছিল আলবিসেলেস্তেরা।
শীর্ষ ইউরোপিয়ান দলগুলোর বিপক্ষে যথেষ্ট ম্যাচ খেলতে না পারায় আর্জেন্টিনার ঘাটতি থাকতে পারে। তাছাড়া কোপা আমেরিকার পর অ্যাঞ্জেল দি মারিয়ার আন্তর্জাতিক অবসরেও শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু এনজো ফের্নান্দেজ ও জুলিয়ান আলভারেজ গত দুই বছরে বেশ পরিণত। আর যে দলে মেসি আছেন, তাদের সামনে কোনো বাধাই বাধা নয়। সুপার কম্পিউটারের মতে, আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ৮.৭ শতাংশ।
জার্মানি: ৭.১%
সুপার কম্পিউটারের পঞ্চম ফেভারিট জার্মানি। তাদের রেকর্ড ছোঁয়া পঞ্চম বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা ৭.১ শতাংশ।
যদিও জার্মানি ১২ বছর ধরে বিশ্বকাপের কোনো নকআউট ম্যাচ না খেলেই আগামী আসরে নামছে। ২০১৪ সালের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারানোর পর থেকে গত দুটি আসরে গ্রুপ পর্বে ছিটকে যেতে হয়েছিল তাদের।
গত বছর ইউরোতে ঘরের মাঠে জুলিয়ান নাগেলসমানের দল কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যায় স্পেনের কাছে। তাতে করে টানা চারটি মেজর টুর্নামেন্টে প্রথমবার সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল।
এবারের বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়াও তাদের জন্য সহজ ছিল না। বাছাইপর্বে প্লে অফ এড়াতে ‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে তাদের স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে জিততেই হতো। ম্যাচটি তারা জিতেছে ৬-০ গোলে।
গত ইউরোতে সেরা ফুটবলই খেলেছিল জার্মানি। গড় বল দখল (৬২.৫%) ও গোল করার (১১) তালিকায় তারা ছিল দ্বিতীয় স্থানে। তবে বিশ্বকাপে দল বাছাইয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে নাগেলসমানকে।
মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন পিঠের অস্ত্রোপচারের পর বার্সেলোনার মূল গোলকিপারের মর্যাদা হারিয়েছেন। টনি ক্রুসের অবসরের পর থেকে মাঝমাঠের জুটি বাছাইয়ে কয়েকবার পরীক্ষা নিতে হয়েছে তাকে। শেষ দুটি বাছাইয়ে আলেক্সান্দার পাভলোভিচ জুটি গড়েছিলেন লিওন গোরেৎকার সঙ্গে।
অল্পের জন্য গ্রুপ পর্বের ড্রয়ে এক নম্বর পট থেকে ছিটকে যায়নি জার্মানি। শীর্ষ বাছাইয়ের তালিকায় ১২তম ও শেষ দল তারা। তবুও তাদেরকে ফেভারিট হিসেবে না ধরা হবে প্রশ্নবিদ্ধ।

পর্তুগাল: ৬.৬%
২০২২ বিশ্বকাপের পর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো যখন ম্যানইউ ছেড়ে আল-নাসরে যোগ দিলেন, তখন অনেকে হয়তো ভেবেছিলেন তিনি হারিয়ে যাবেন। কিন্তু পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী শিরোনাম তৈরি করা থামাননি। ফিফা সম্প্রতি লাল কার্ডের নিয়ম শিথিল করে তাকে বিশ্বকাপে প্রথম থেকে খেলার ছাড়পত্র দিয়েছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখার পর তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়ার কথা ছিল তার। ফিফা তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিলেও দুই ম্যাচের শাস্তি স্থগিত রেখেছে।
কাতারে মেসি বিশ্বকাপ জয়ের আক্ষেপ ঘুচালেও এবার রোনালদোর সামনে সুযোগ। সুপার কম্পিউটারের মতে পর্তুগালের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ৬.৬ শতাংশ।
কাগজে কলমে পর্তুগাল টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল। পিএসজির হয়ে গত মৌসুমে উপভোগ্য সময় কাটান ভিতিনহা, জোয়াও নেভেস ও নুনো মেন্দেস। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আলো ছড়ানো রুবেন দিয়াস, বার্নার্দো সিলভা ও ব্রুনো ফের্নান্দেস দলের শক্তি বাড়াচ্ছেন।
তবে টুর্নামেন্ট শুরু হতেই শিরোনামে থাকবেন রোনালদো, যেভাবে ছিলেন ২০২২ সালে কাতারে এবং গত বছর ইউরোতে। বাজে পারফরম্যান্সের পর কাতারে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ষোলোর দল থেকে ছিটকে যান তিনি। তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে গনসালো রামোস ৬-১ গোলের জয়ে হ্যাটট্রিক করেন।
পরে জার্মানিতে ইউরোর মঞ্চে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোতে পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ হয়ে কেঁদে বুক ভাসান রোনালদো। যদিও ম্যাচটি পেনাল্টি শুটআউটে জিতেছিল পর্তুগাল।
পরের পর্বে ফ্রান্সের মুখোমুখি হয় পর্তুগাল। প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ শটের বিপরীতে কোনো গোল না করেই রোনালদো শেষ করেন।
রোনালদো এবার মেসির সঙ্গে রেকর্ড ষষ্ঠ বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন। তবে গোলের হিসাবে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের বেশ পেছনে তিনি। ২২ ম্যাচে ৮ গোল, তিনটি পেনাল্টি থেকে। নকআউটে পর্বে নেই কোনো গোল।
তবে এবারের নেশনস লিগ জয়ের পর আশা বাড়ছে। রোনালদোও সৌদি প্রো লিগে ৮৬ ম্যাচে ৮৪ গোল করে পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী। তাকে বাতিলের খাতায় ফেলা অসম্ভব।

ব্রাজিল: ৫.৬%
বিশ্বকাপের সব আসরে খেলা একমাত্র দল ব্রাজিল। যদিও এবারের বাছাইয়ে তারা তাদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। কনমেবল বাছাইয়ে পঞ্চম হয়ে বিশ্বকাপের টিকিট কাটে তারা।
ওই যাত্রায় শেষ পাঁচ ম্যাচের দায়িত্বে ছিলেন আনচেলত্তি। আট মাসেরও কম সময়ে তিনি বলিভিয়া ও জাপানের মতো দলের কাছে হার দেখেছেন, ড্রয়ের হতাশায় ভাসতে হয়েছে ইকুয়েডর ও তিউনিসিয়ার সঙ্গে।
২৪ বছরের ট্রফিখরা নিয়ে আগামী বিশ্বকাপে খেলবে ব্রাজিল। ১৯৫৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এর আগে তারা লম্বা সময়ের ট্রফি খরায় ভুগেছিল ১৯৭০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। সেই খরা কেটেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। আবারো ২৪ বছরের খরা, আসর সেই যুক্তরাষ্ট্রে। সুপার কম্পিউটারের মতে, তাদের সম্ভাবনা ৫.৬ শতাংশ।
ব্রাজিলের সব বাধা উতরে যেতে ভূমিকা রাখতে পারেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। কিন্তু তার সেরাটা বের করে আনার জন্য কাজ করতে হবে আনচেলত্তিকে।
চেলসির হয়ে উড়ছেন এস্তেভাও। ফিটনেসের প্রমাণ দিতে পারলে জায়গা হতে পারে নেইমারের। ২০২৩ সালের পর তার অন্তর্ভুক্তি ব্রাজিলের জন্য হতে পারে বড় ব্যাপার।
শেষ দুটি বিশ্বকাপ ও গত বছরের কোপা আমেরিকায় শেষ আটের বাধা টপকাতে পারেনি ব্রাজিল। তবে বড় টুর্নামেন্টে যদি কোনো কোচ ব্রাজিলকে সাফল্য এনে দিতে পারেন, সেটা হবেন আনচেলত্তিই।
নেদারল্যান্ডস: ৫.২%
কোনো শিরোপা না জিতে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ ফাইনালে (৩) খেলা দল নেদারল্যান্ডস। আগামী বছরের বিশ্বকাপে ট্রফি জিততে পাঁচ শতাংশের বেশি সম্ভাবনা থাকা শেষ দল তারা: ৫.২ শতাংশ।
২০২৪ সালের ইউরোতে তারা সেমিফাইনালে খেলেছিল, শেষ দিকের গোলে হার মানে ইংল্যান্ডের কাছে। ২০১৪ বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়ার পর যে কোনো টুর্নামেন্টে এটাই ছিল তাদের সেরা সাফল্য।
তাদের বর্তমান দলে স্পষ্টতই ইংলিশ প্রভাব রয়েছে। প্রিমিয়ার লিগে খেলা তিজানি রেইন্ডার্স, কডি গাকপো, জাভি সিমন্স ও ডনিয়েল মালেন শেষ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে লিথুয়ানিয়ার বিপক্ষে গোল করেছেন। ডাচদের ৪-৩-৩ এর পুরোনো ফর্মেশনে খেলিয়ে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন রোনাল্ড কোম্যান। আক্রমণভাগে নজরে থাকবেন মেম্ফিস ডিপে। সেপ্টেম্বরে তিনি ৫১তম গোল করে নেদারল্যান্ডসের শীর্ষ গোলদাতা হয়েছেন।
অন্য ফেভারিটদের মতো হয়তো তারকা নেদারল্যান্ডসের নেই। কিন্তু প্রত্যেকবারের মতো এবারো তারা নজরে থাকবে। সুপার কম্পিউটার তাদের শিরোপার দাবিদার বলছে।
নরওয়ে: ২.৩%
১৯৯৮ সালে শেষবার বিশ্বকাপে খেলেছিল নরওয়ে। বাছাইয়ের শেষ রাউন্ডে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ২৮ বছর পর আবারো বিশ্বমঞ্চে তারা।
ক্লাব কিংবা জাতীয় দল- দুই জার্সিতে এবার অদম্য আর্লিং হালান্ড। বাছাইয়ের এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ছুঁয়েছেন তিনি। ৮ ম্যাচে ইতালির ৩৭ গোলের মধ্যে তার গোল ১৬টি। ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সর্বোচ্চ ১৬ গোল করেছিলেন পোল্যান্ডের রবার্ট লেভানডোভস্কি। ম্যানসিটির এই ফরোয়ার্ডের ওপর ভর করে নরওয়ে চমক দেখানোর স্বপ্ন দেখছে। যদিও শিরোপা জয়ের সম্ভাবনায় সুপার কম্পিউটার তাদের পেছনে রাখছে। তাদের সম্ভাবনা ২.৩ শতাংশ। ফেভারিটের তালিকায় নেদারল্যান্ডসের পরে তারা।
