কুয়াকাটার ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ এখন আলোচনার কেন্দ্রে

আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫২ পিএম

পটুয়াখালীর কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার পূর্বে সবুজে ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানটি এখন পর্যটকদের কাছে পরিচিত হচ্ছে ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে। সমুদ্রের ঢেউ, সবুজ বনভূমি, লেক আর মুক্ত আকাশের মিলনে গড়ে ওঠা এই স্পটটি দিন দিন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।

ইতোমধ্যেই স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুরা এখানে তাঁবু টাঙিয়ে রাত্রিযাপন করছেন। সকালের সূর্যোদয় আর বিকেলের সূর্যাস্ত—একই স্থান থেকে উপভোগ করার বিরল সুযোগ মিলছে এখানেই। সূর্যাস্তের সময় সূর্যটি যেন সবুজ বনের বুকে হারিয়ে যায়, সেই দৃশ্য মুগ্ধ করছে পর্যটকদের।

স্থানীয় পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই এলাকা ইকো ট্যুরিজমের জন্য বিশাল সম্ভাবনাময়। প্রকৃতির স্বাভাবিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রেখে পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নিলে এটি দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হতে পারে।

কুয়াকাটার ট্যুর গাইড আবুছালেহ জানান, প্রথমে আমরা কয়েকজন এটাকে ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ বলে ডাকতাম। তখন তেমন কেউ চিনত না। পরে মি. লাক্সছু নামের এক ব্লগার কুয়াকাটা আসেন। আমি নিজে মোটরসাইকেলে করে তাকে এই জায়গায় নিয়ে যাই। পথে কাউয়ারচর, গঙ্গামতির লেকসহ বেশ কয়েকটি স্পট ঘুরে তিনি ভিডিও ধারণ করেন। শেষে এই স্পটের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ব্লগের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করে তোলেন। এরপর থেকেই ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন নষ্ট হচ্ছে কিছু পর্যটকের অসচেতন আচরণে। সাউন্ড বক্স বাজানো, প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা ও ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে এলাকার সৌন্দর্য।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা নুরসাত ও সোহান দম্পতি বলেন, আমরা অনেক জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু এক জায়গা থেকে সূর্য ওঠা আর ডোবা দুটোই দেখা যায়—এমন দৃশ্য সত্যিই অনন্য।

পর্যটক রায়হান বলেন, মিনি সুইজারল্যান্ডে এসে মনে হচ্ছে, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছি। এখানকার নীরবতা আর বাতাস অন্যরকম শান্তি দেয়।

মি. লাক্সছু জানিয়েছেন, আমি যখন প্রথম কুয়াকাটার এই এলাকায় আসি, তখনও জায়গাটা তেমন পরিচিত ছিল না। চারদিকে অগণিত সবুজ গাছ, নীল আকাশ আর সাগরের শান্ত ঢেউ—সব মিলিয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। আমার মনে হলো, এ যেন বাংলাদেশের ভেতর লুকিয়ে থাকা এক টুকরো সুইজারল্যান্ড! তাই ব্লগে আমি প্রথম এই জায়গাটিকে ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচয় করিয়ে দিই। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই স্থানটি দেশের মানুষদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়, আর আমি নিজেও একজন ব্লগার হিসেবে স্বার্থকতা অনুভব করি—কারণ প্রকৃতির এমন অনাবিষ্কৃত সৌন্দর্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে পেরেছিলাম।

কুয়াকাটা উপকূল পরিবেশ আন্দোলনের (উপরা) আহ্বায়ক কেএম বাচ্চু বলেন, অল্প পরিকল্পনা ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় এই জায়গা পুরো দেশের অন্যতম পর্যটন স্পটে পরিণত হতে পারে। তবে এখনই পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

পর্যটন বিশেষজ্ঞ হোসাইন আমির বলেন, ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলা গেলে স্থানীয় অর্থনীতি যেমন চাঙা হবে, তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।

কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ইয়াসিন সাদেক জানিয়েছেন, এই এলাকাকে ঘিরে আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি। পর্যটনবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সড়ক সংযোগ বাড়ানো হবে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার হামিদ ফোনে বলেন, মিনি সুইজারল্যান্ডকে ঘিরে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য পর্যটন প্রকল্পের প্রাথমিক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে সমন্বিতভাবে কাজ করা হবে।

সবুজ প্রকৃতি, শান্ত পরিবেশ ও সমুদ্রের মায়ায় মোড়া কুয়াকাটার মিনি সুইজারল্যান্ড এখন নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা, পরিকল্পনা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ।

NJ