ঢাকা
সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনই মুর্শিদাবাদে একই নামে নতুন মসজিদ কেন?

আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৫ এএম

ভারতের অযোধ্যার বাবরি মসজিদের অনুকরণে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে মসজিদ তৈরি করতে চান দেশটির বিধায়ক হুমায়ুন কবির। এজন্য শনিবার মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সদ্য বহিষ্কৃত এই নেতা।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভেঙে ফেলা হয়েছিল অযোধ্যার বাবরি মসজিদ, যাকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে আলোড়ন দেখা দেয়। সে কথা মাথায় রেখেই এই দিনকেই মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন হুমায়ুন কবির।

দলের ‘ভ্রূকুটি’ উপেক্ষা করেই অবশ্য বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের এই বিধায়ক এবং তার এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত ছিল রাজ্য রাজনীতি।

একদিকে বিজেপি এবং কংগ্রেস যেমন তাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি, তেমনই তার নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেসও সম্প্রতি হুমায়ুনকে সাসপেন্ড করে। তার বিরুদ্ধে তৃণমূলের তরফ থেকে ধর্মীয় বিভাজনের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। বিজেপির সাথে তার যোগ রয়েছে বলে অভিযোগও তোলা হয়।

অন্যদিকে, শনিবারের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শান্তি ও নিরাপত্তা ভঙ্গ হতে পারে- এমন আশঙ্কা জানিয়ে একটা পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে রাজি হয়নি আদালত; বরং রাজ্য সরকারের ওপরেই নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্র সরকারের আনা ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মুর্শিদাবাদে। সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে ওই জেলায়। প্রয়োজন হলে শনিবার সেই বাহিনী ব্যবহার করা যাবে বলে কেন্দ্র জানিয়েছিল।

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর (শিলান্যাস) কর্মসূচির আগে শুক্রবার থেকেই বাড়ানো হয়েছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা, র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স বা র‍্যাফ মোতায়েন করা হয়েছিল। অন্যদিকে সকাল থেকেই অনুষ্ঠান মঞ্চে মানুষ জড়ো হতে থাকে।

শিলান্যাসের সময় কিছুটা চ্যালেঞ্জের সুরে হুমায়ুন কবির বলেছেন, ‘বাবরি মসজিদ তৈরি হবে হবে হবেই। কোনো শক্তি আটকাতে পারবে না, আটকাতে এলে জীবনের বিনিময়ে হলেও মোকাবিলা করব।’

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩ বছর পর, সেই দিনকে ঘিরেই উত্তাপ পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ময়দান। তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রতিবছর এই দিনে সংহতি দিবস হিসেবে পালন করা হয়, এবারো তা হচ্ছে।

অন্যদিকে, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে ৬ ডিসেম্বরই শৌর্য যাত্রার আহ্বান করা হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি অন্যান্য বিজেপি নেতারাও ছিলেন।

আমি অসাংবিধানিক কাজ করছি না
মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ তৈরি নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে দীর্ঘ সময় ধরেই অনড় ছিলেন হুমায়ুন কবির। দলের কোনোরকম আপত্তিই গ্রাহ্য করেননি তিনি। বরং জানিয়ে দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ তিনি তৈরি করবেন।

মঞ্চ থেকে হুমায়ুন কবির বলেছেন, ‘আমি কোনো অসাংবিধানিক কাজ করছি না। হাই কোর্ট বলে দিয়েছে, হুমায়ুন কবির কোনো অসাংবিধানিক কাজ করেনি।’

পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্ত স্থাপনের ঘোষণার পর বিজেপি পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে।

‘আমরা ঘোষণা করার পরই বিজেপি বললো- এখানে মুর্শিদাবাদে রাম মন্দির স্থাপন করবে। আমরা বাধা দিইনি। সবার নিজের নিজের ধর্ম পালন করার অধিকার ভারতবর্ষের সংবিধানে রয়েছে,’ বলেছেন তিনি।

এরপরই বিজেপিকে আক্রমণ করেন তিনি। তার কথায়, ‘আমরা বাবরি মসজিদ তৈরি করতে পারব না? আমার মাথার দাম এক কোটি টাকা ঘোষণা করা হচ্ছে। এত বড় হিম্মত! আমরা আমাদের ধর্মের প্রতি যেমন আস্থাশীল, তেমনই অন্য ধর্মের প্রতিও আমরা শ্রদ্ধাশীল। মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন- মুর্শিদাবাদ থেকে এক একটা ইট খুলে নিয়ে যাবেন, তাহলে বলি- পশ্চিমবঙ্গে যে ৩৭ শতাংশ জনসংখ্যা রয়েছে তারা জীবন দিয়ে বাবরি মসজিদকে রক্ষা করবে।’

তিনি জানিয়েছেন, মসজিদের পাশাপাশি হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, হোটেল তথা রেস্টুরেন্ট, পার্কসহ অনেক কিছুই তৈরি হবে সেখানে।

হুমায়ুন কবিরের কথায়, ‘৩০০ কোটি টাকা বাজেট। আমাকে একজন ব্যবসায়ী কথা দিয়েছেন ৮০ কোটি টাকা দেবেন।’

এর আগেই অবশ্য তিনি জানিয়েছিলেন যে সরকারি অর্থে এই মসজিদ তৈরি হবে না।

অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, ‘৩৩ বছর আগে মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হানা হয়েছিল। সেই আঘাতে আজ সামান্য হলেও প্রলেপ পড়েছে। আমি বলছি- এখানে বাবরি মসজিদ তৈরি হবে হবে হবেই।’

এমন অবস্থানের কারণে দলের সাথে বেশকিছু দিন ধরেই দূরত্ব তৈরি হয়েছিল হুমায়ুন কবিরের। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগ তুলে সতর্কও করা হয়েছিল। এরপর দলের পক্ষে কথা বললেও, তার সাথে দূরত্ব স্পষ্ট করে দেয় তৃণমূল কংগ্রেস এবং তাকে সাসপেন্ড করা হয়। সূত্র : বিবিসি

HN