ঢাকা
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাঁচ যুদ্ধবিমান

আপডেট : ১০ মে ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম

আধুনিক বিশ্বের সামরিক কৌশল ও প্রতিরক্ষায় যুদ্ধবিমানের (ফাইটার জেট) ভূমিকা অপরিসীম। এগুলো শুধু আকাশে শত্রু দমনেই নয়, বরং প্রতিরক্ষা, নজরদারি এবং আক্রমণাত্মক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রগতি বিশ্বকে এমন কিছু অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান উপহার দিয়েছে, যা আকাশে নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। আজ আমরা এমনই বিশ্বের শক্তিশালী পাঁচ যুদ্ধবিমান নিয়ে বিস্তারিত, সুনির্দিষ্ট ও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন তুলে ধরছি, যা সামরিক কৌশল এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

লকহিড মার্টিন এফ-২২ র‌্যাপ্টর

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-২২ র‌্যাপ্টরকে অনেকেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ফাইটার জেট হিসেবে বিবেচনা করেন। এটি একাধারে সুপিরিওরিটি ফাইটার ও স্টিলথ প্রযুক্তির মাস্টারপিস। এর সর্বোচ্চ গতি প্রায় ১,৫০০ মাইল/ঘণ্টা, এবং উন্নত স্টিলথ ডিজাইন শত্রু রাডারের চোখ ফাঁকি দিতে সহায়তা করে। ২০০৫ সালে মার্কিন বিমানবাহিনীতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে এটি আকাশযুদ্ধে একক আধিপত্য নিশ্চিত করে চলেছে। এফ-২২ কেবল গতি নয়, চূড়ান্ত সঞ্চালনক্ষমতা (maneuverability), সর্বাধুনিক অস্ত্র এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেমের জন্যও খ্যাত।

লকহিড মার্টিন এফ-৩৫ লাইটনিং ২

এফ-৩৫ হলো বহুমুখী (multirole) ফাইটার, যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বহু দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর তিনটি আলাদা সংস্করণ — এফ-৩৫এ (স্ট্যান্ডার্ড), এফ-৩৫বি (শর্ট টেক-অফ এবং ভার্টিকাল ল্যান্ডিং) এবং এফ-৩৫সি (এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার-উপযোগী)। প্রায় ১,২০০ মাইল/ঘণ্টা গতিসম্পন্ন, উন্নত সেন্সর ফিউশন প্রযুক্তি, অত্যাধুনিক কমিউনিকেশন সিস্টেম এবং অস্ত্রবহনের ক্ষমতা এটিকে আকাশে অন্যতম ভয়ঙ্কর অস্ত্র হিসেবে গড়ে তুলেছে।

বোয়িং এফ-৪৭

নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডমিন্যান্স (NGAD) প্রোগ্রামের অধীনে তৈরি হওয়া বোয়িং এফ-৪৭ হচ্ছে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, যা ভবিষ্যতের আকাশযুদ্ধে বিপ্লব ঘটাবে। এটি স্বায়ত্তশাসিত (autonomous) অপারেশন, হাইপারসনিক গতি এবং অদৃশ্যমানতার সর্বোচ্চ স্তর প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর চূড়ান্ত ফায়ারপাওয়ার এবং ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম বর্তমান যেকোনো ফাইটার জেটের চেয়ে উন্নত হবে, যা বৈশ্বিক সামরিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনবে।

চেংদু জে-২০

চীনের প্রথম ফিফ্থ-জেনারেশন স্টিলথ ফাইটার জে-২০ চীনা প্রতিরক্ষার গৌরবের প্রতীক। এটি দীর্ঘ-পাল্লার আক্রমণ, আধুনিক রাডার ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম এবং উন্নত স্টিলথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। প্রায় ১,৩০০ মাইল/ঘণ্টা গতির জে-২০ শত্রু প্রতিরক্ষা ভেঙে ঢুকে আঘাত হানতে সক্ষম, যা যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রশক্তির জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টিএফ কান

তুরস্কের তৈরি ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান টিএফ কান দেশটির প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য এক বিশাল সাফল্য। উন্নত সেন্সর, উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন, স্টিলথ কাঠামো এবং বহুমুখী মিশন প্রোফাইল এটিকে বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক ফাইটার জেটে রূপান্তর করেছে। এটি তুরস্কের আকাশ প্রতিরক্ষায় এক নতুন যুগের সূচনা করছে এবং ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিযোগিতায় বড় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পাঁচটি যুদ্ধবিমান কেবল প্রযুক্তির শীর্ষ সাফল্য নয়, বরং বৈশ্বিক ক্ষমতার প্রতীক। প্রতিটি ফাইটার এককভাবে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে — কারও বিশেষত্ব স্টিলথ, কারও ফায়ারপাওয়ার, আবার কারও চূড়ান্ত গতিশীলতা। এরা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তার, সামরিক ব্যালান্স ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।

Raj/AHA
আরও পড়ুন