সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের মধ্যে দিয়ে ২৪ বছরের শাসনের অবসান হলো। রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে আসাদ রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে বাশার আল-আসাদ দামেস্ক ছেড়ে কোথায় গেছেন, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
দীর্ঘদিনের শাসক পালিয়ে যাওয়ার পর সিরিয়ার সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠী ঘোষণা করেছে, আসাদ শাসনের সমাপ্তি দেশটির ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
সিরিয়ার দুই উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট আসাদ বিমানে করে দামেস্ক ছেড়েছেন, তবে তার গন্তব্য তাদের জানান নেই। হোমস শহর ‘পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন’ করা হয়েছে। দামেস্কের সেদনায়া কারাগার থেকে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি নেই। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বেতার, টেলিভিশন, দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সাইয়্যেদানিয়া সামরিক কারাগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ রাজধানীজুড়ে উল্লাস করছেন ও ‘স্বাধীন’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার একের পর এক শহর দখল করে নিচ্ছেন বিদ্রোহীরা। সবশেষ দামেস্ক দখলের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ২৪ বছরের শাসনের অবসান হলো।
এক ভিডিও বার্তায় সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি বলেছেন, সিরিয়ার জনগণের পছন্দ করা নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত তিনি। কাতার, সৌদি আরব, জর্ডান, মিশর, ইরাক, ইরান, তুরস্ক ও রাশিয়া যৌথ বিবৃতিতে পরিস্থিতিকে ‘বিপদজনক’ বলে উল্লেখ করে রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে দামেস্কে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। বেশ কিছু ভিডিওতে সিরিয়ার রাজধানী থেকে সরকারি সৈন্যদের শহর ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। আল জাজিরা এসব ফুটেজেরও সত্যতা যাচাই করেছে।
এছাড়া দামেস্কের প্রাণকেন্দ্রে গুলির তীব্র শব্দ শোনা গেছে বলে রোববার সেখানকার দুই বাসিন্দা জানিয়েছেন। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে গোলাগুলির উৎস কী তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
গত মাসের শেষে হঠাৎ করেই সিরিয়ার পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ২৭ নভেম্বর বিদ্রোহীরা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোতে আক্রমণ শুরু করে। পরে ১ ডিসেম্বর বিদ্রোহীরা আলেপ্পোর কুর্দি যোদ্ধাদের দখলে থাকা কিছু সংখ্যাগরিষ্ঠ কুর্দি জেলা ছাড়া, বাকি অংশ নিজেদের দখলে নেয়। পরে ৫ ডিসেম্বর দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শহর হামা দখলে নেয় বিদ্রোহীরা। ৭ ডিসেম্বর সরকার নিয়ন্ত্রিত রাজধানী দামেস্ক ঘেরাও করার জন্য অভিযান শুরু করে তারা। এর মধ্যে রোববার (০৮ ডিসেম্বর) সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমসের নিয়ন্ত্রণ দখল করার ঘোষণা দেয় বিদ্রোহীরা।
২০০০ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট হন বাশার আল-আসাদ। একই সময়ে তিনি বাথ পার্টির নেতা ও সামরিক বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব নেন। তবে তার শাসনের এক দশক পর, ২০১১ সালে সিরিয়ার জনগণ গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনে নামলে তিনি কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেন।
