কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মার্ক কার্নি। মার্ক কার্নি ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন। আবার ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হলেন।
এর মাধ্যমে দেশটিতে জাস্টিন ট্রুডো অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন ট্রুডো। খবর এএফপির।
রোববার (৯ মার্চ) রাতে কানাডার ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টি মার্ক কার্নিকে নতুন দলীয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেছে। আর নিয়ম অনুযায়ী এখন তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রীও হবেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ট্রুডো তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
তিনি এমন সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী হলেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-নির্বাচিত হওয়ার পরই কার্নি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক নিয়ে কথা বলেন। কানাডিয়ান পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপকে ‘নিজেদের জীবনের সবচেয়ে বড় সংকট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন কার্নি।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা এই বাণিজ্য লড়াই চাইনি। কিন্তু কানাডিয়ানরা সবসময় প্রস্তুত থাকে যখন কেউ তার হাতের গ্লাভস ফেলে দেয়। তো মার্কিনিদের কোনো ভুল করা উচিত নয়। হকি খেলার মতো বাণিজ্য লড়াইয়েও কানাডা জিতবে।’
দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হয়েই কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে অভিহিত করে কটাক্ষ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ‘গভর্নর ট্রুডো’ হিসেবে ডেকেছেন তিনি। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের জবাব কিছুটা ঘুরিয়ে দিয়েছেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী-নির্বাচিত মার্ক কার্নি।
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা কানাডা নয়, এবং কানাডা কখনো কোনোদিন কোনোভাবে আমেরিকার অংশ হবে না।’
সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ জানিয়েছে, এই সপ্তাহের যে কোনো একদিন কানাডার গভর্নর জেনারেলের কাছে প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করবেন মার্ক কার্নি। কানাডার গভর্নর জেনারেল যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রতিনিধি। নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্নি এপ্রিলের শেষ দিকে কানাডায় নতুন সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারেন।
রাজধানী অটোয়ায় প্রায় এক হাজার ৬০০ জন দলীয় সমর্থকের সামনে ফলাফল ঘোষণার সময় সেখানে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। লোকজন উল্লাস করতে থাকেন এবং কার্নিকে স্বাগত জানান। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই নির্বাচনে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন।
৫৯ বছর বয়সি কার্নি, ‘রাজনৈতিক বহিরাগত’। কার্নি প্রত্যন্ত উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলগুলির ফোর্ট স্মিথে জন্মগ্রহণ করেন এবং হার্ভার্ডে পড়াশোনা করেছেন। সেই সময় তিনি বেশ ভালো আইস হকি খেলতেন। তিনি নিজের কর্মজীবে গোল্ডম্যান শ্যাকসে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কটের সময় কানাডাকে বিপর্যয় এড়াতে সাহায্য করেছিলেন তিনি।
তিনি ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংক অব কানাডার অষ্টম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আর্থিক স্থিতিশীলতা বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীত্ব ও দলীয় প্রধানের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন জাস্টিন ট্রুডো। তিনি ২০১৫ সালে প্রথম দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। এমন সময়ই তিনি সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
