ঢাকা
সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ

দাবি না মানলে ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের

আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম

প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির (ঢাকেবি) অধ্যাদেশ জারির দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন করছেন রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এবার দাবি না মানলে ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শিক্ষা ভবনের সামনে আন্দোলন কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন। 

অবস্থানরত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ না নিয়ে আমরা ফিরবো না। অধ্যাদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান ছাড়বেন না।’

তারা জানান, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সড়ক ছেড়ে শিক্ষা ভবনের পাশে আন্দোলন করছি। দাবি না মানলে আগামীকাল আবারও ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

এদিকে দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা শিক্ষা ভবন ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। পরে তারা ভবনের সামনের সড়ক অবরোধ করে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন। 

এতে হাইকোর্টের মাজার রোড, সচিবালয়ের সামনের সড়কসহ আশপাশের এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি, দ্রুত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের জানান, প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশ করলেও এখনো চূড়ান্ত অধ্যাদেশের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এতে পরিচয় সংকট, অ্যাকাডেমিক অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রায় দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। দ্রুত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।

এদিকে অবরোধের পাঁচ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক না ছাড়লে সচিবালয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম।

তিনি বলেন, সার্বিক বিষয়ে তোমরা সচিবালয়ে নিজেরাই গিয়ে জানতে পারো কী অগ্রগতি হয়েছে। তোমাদের যদি কোনো বক্তব্য থাকে, সেটাও দিয়ে আসতে পারো। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমবে।

এ বিষয়ে সাত কলেজেকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের দেওয়া আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে শিক্ষার্থীরা। আমরা কোনো আলোচনায় যাচ্ছি না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ 

তবে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার টানটান পরিস্থিতির পর সন্ধ্যায় অবরোধ প্রত্যাহার করলেও দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন সরকারি পাঁচ কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির (সাত কলেজের) শিক্ষার্থীরা। এতে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র স্কুলিং মডেল ভিত্তিক খসড়া অধ্যাদেশ উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে বলে অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করেন তারা। স্কুলিং মডেল বাতিল এবং উচ্চমাধ্যমিকের স্বতন্ত্র কাঠামো বজায় রাখার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধও করেছিলেন তারা। 

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত অধ্যাদেশ জারির বিষয়টি নিয়ে আমরা বারবার বলে আসছি, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যৎ নিয়ে যেভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। অধ্যাদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ 

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী স্মৃতি আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘসূত্রতা ও ‘শিক্ষা প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতার’ আমাদের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারকে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

সাত কলেজেকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. নাঈম হাওলাদার বলেন, ‘অধ্যাদেশ জারির একদফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত অধ্যাদেশ জারি না হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নামটির সামনে থেকে প্রস্তাবিত শব্দটি উঠে যাচ্ছে, ততক্ষণ আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব। ‘প্রয়োজনে লাগাতার কর্মসূচি চলবে’ বলে হুঁশিয়ার করে মো. নাঈম বলেছেন, তারা কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবেন। শিক্ষা সিন্ডিকেটের হাত থেকে সাত কলেজকে মুক্ত করে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে রূপান্তর করতেই হবে।‘

এদিকে গত ১২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, সাত কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গুজব এড়িয়ে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ মার্চ সরকার রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে পৃথক করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয়। প্রস্তাবিত নামটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নির্ধারণ করে। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।

LH/FJ