নির্বাচন নিয়ে ভারতের কোনো উপদেশের প্রয়োজন নেই: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম

বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে, তা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কোনো উপদেশের প্রয়োজন নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রহসনমূলক নির্বাচন নিয়ে ভারত টু শব্দটিও করেনি, তাই এখন তাদের ‘নসিয়ত’ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারতের পক্ষ থেকে সম্প্রতি কিছু বক্তব্য এসেছে, যেখানে আমাদের কিছু নসিয়ত করা হয়েছে। সেই নসিয়ত আমাদের দরকার আছে বলে মনে করি না। আমরা বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে সেটা নিয়ে আমাদের প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই স্পষ্টভাবে বলে আসছে, আমরা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই যেখানে অত্যন্ত উচ্চ মানের নির্বাচন হবে এবং মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে; যে পরিবেশ গত ১৫ বছর দেশে ছিল না।’

ভারতের বর্তমান অবস্থানের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘এখন ভারত আমাদের এটা নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে, যা আমি সম্পূর্ণ ‘অগ্রহণযোগ্য’ মনে করি। তারা জানে গত ১৫ বছর ধরে যে সরকার ক্ষমতায় ছিল, তাদের সঙ্গে ভারতের অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক ছিল। তখন নির্বাচনগুলো প্রহসনমূলক হলেও তারা একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। এখন আমরা সামনে একটি ভালো নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি। তাই এই মুহূর্তে আমাদের নসিয়ত করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা জানি আমাদের কী করতে হবে। আমরা এমন নির্বাচন করব যেখানে জনগণ যাকে ভোট দেবে, তারাই নির্বাচিত হবে।’

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দিল্লির ইস্যু করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গটি ছিল। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে ভারতের অবস্থান এবং অন্তর্বর্তী সরকার এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে ভারত আশা করে।

এর তিন দিনের মাথায় বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও নির্বাচনের প্রসঙ্গ টানা হয়। সেখানে পুনর্ব্যক্ত করা হয় যে, বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে ভারত রয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে আসছে দেশটি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তাদের হাইকমিশনারকে ডেকেছি। আমাদের বক্তব্যের সঙ্গে তাদের দ্বিমত থাকায় তারা সব গ্রহণ করেনি। একইভাবে আমাদের হাইকমিশনারকেও তারা ডেকেছে। এটি খুব অপ্রত্যাশিত নয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটা ঘটে।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা জানি আগে তিনি ভারতে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিতেন। এখন প্রতিনিয়ত মূল ধারার গণমাধ্যমেও তার বক্তব্য আসছে এবং সেই বক্তব্যে প্রচুর উসকানি থাকছে। যিনি একটি আদালত থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত, তিনি পাশের দেশে বসে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। সেই ক্ষেত্রে আমরা তার বক্তব্য বন্ধ বা তাকে ফেরত চাইব, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’

DR/FJ
আরও পড়ুন