ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বাঁশখালী ইকোপার্ক    

আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৫ পিএম

বাঁশখালী ইকোপার্ক এক নয়নাভিরাম অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা একটি পার্কের নাম। কয়েক মাস আগে পার্কের কচুরিপানা ও লতাপাতা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলেও এখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে বাঁশখালীর ইকোপার্ক।

চারদিকে সবুজ গাছপালা, স্বচ্ছ পানির হ্রদ ও দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু ইকোপার্ককে করে তুলেছে প্রকৃতির স্বপ্নরাজ্য। সবুজ প্রকৃতি ছাড়াও স্বচ্ছ হ্রদ ও নানা পশু-পাখির কোলাহল দর্শনার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করছে প্রতিনিয়ত। তাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক থাকার পরও চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্কে বাড়ছে দর্শনার্থী।

জানা যায়, ‘২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বাঁশখালী ইকোপার্কটিতে রয়েছে পিকনিক সেট, দ্বিতল রেস্ট কর্নার, দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, সাসপেনশন ব্রিজ, দোলনা, স্কিপার, দ্বিতল রেস্ট হাউস, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ব্যারাক ৪ ইউনিট, প্রধান ফটক, দুইটি সুবিশাল হ্রদ, ওয়াটার বোট, বন্য প্রাণী অবলোকন টাওয়ার, কংক্রিটে নির্মিত শাবের ছাতা, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, ফেনোরোমিক ভিউ টাওয়ারসহ নানা বিনোদনের স্পট। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি বা সরীসৃপ।

এদিকে কালের পরিক্রমায় সেসব বিনোদন ক্ষেত্র ও স্থাপনা নষ্ট হয়ে ময়লা-আবর্জনায় পরিণত হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বাঁশখালী ইকোপার্কটি এখনো টিকে রয়েছে। দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু, স্বচ্ছ হ্রদ, পশুপাখি ও সবুজ গাছপালা এখনো দর্শনার্থীদের মন জয় করে।

প্রায়শই ইকোপার্কের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে পিকনিক হয়ে থাকে। প্রতি বছর শীত বা ছুটর দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠন শিক্ষা সফর ও বনভোজনসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে ছুটে আসেন ইকোপার্কে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, 'ইকোপার্কের হ্রদের কচুরিপানা ও লতাপাতা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। চারদিকে শুধু সবুজ গাছপালা ও পাখির কোলাহল। স্বচ্ছ হ্রদের পানি যেন আয়নার মত। এছাড়া বিরল ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছ ইকোপার্ককে করে তুলেছে প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য। বাগানসহ সব স্থাপনা বেশ পরিপাটি। দুই হ্রদ ভরে গেছে বৃষ্টির স্বচ্ছ পানিতে। ইকোপার্কে সন্ধ্যা বেলায় আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী। পার্কের ঝুলন্ত সেতু ও অবলোকন টাওয়ার থেকে উপভোগ করা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

তবে পার্কের দুই হ্রদে ভালো কোনো ওয়াটার বোট না থাকায় দর্শনার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে হতাশা। বিভিন্ন স্থাপনার বেহাল অবস্থাও বেশ চোখে পড়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, 'পার্কটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওই এলাকার গুরুত্ব বেড়েছে। অতীতে ইকোপার্কে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসতেন। সে সময় বিভিন্ন দিবসকে ঘিরে ধারণ ক্ষমতার ৪-৫ গুণ দর্শনার্থীর সমাগম দেখা যেতো পার্কে। তাদের পদচারণায় মুখরিত থাকত পুরো এলাকা। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা, বনকর্মীদের জনবল সংকট, পার্কের স্থাপনা সংস্কার না করা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক থাকার কারণে জৌলুস হারাতে বসেছে পার্কটি।

তাদের দাবি, দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পার্কটির বিভিন্ন অবকাঠামো সংস্কার করা হলে পার্কটি তার অতীতের জৌলুশ ফিরে পাবে। তাতে বাড়বে দর্শনার্থী ও সরকার পাবে রাজস্ব। 

ইকোপার্কে ঘুরতে আসা সাতকানিয়ার বাসিন্দা মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, 'সময় পেলে ইকোপার্কে চলে আসি। এই পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সব সময় মানুষ মুগ্ধ হয়। শীতকালে পার্কের হ্রদে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। সে সময়ে নিয়মিত আসা হয়। তবে পার্কের বিনোদন ক্ষেত্রের সেই সব বাহারি স্থাপনা ভেঙে গেছে। দর্শনার্থীদের ধরে রাখতে হলে এসব স্থাপনা দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।' 

চকরিয়ার বাসিন্দা নুরুল কবির বলেন, ‘৫ বছর আগে এসেছিলাম তখন এই পার্কটি সুন্দর ও দেখার মতো ছিল। বিনোদন ক্ষেত্রের সেসব বাহারি স্থাপনা ছিল। এখন দেখি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়া কিছুই নাই। শুধুমাত্র ঝুলন্ত ব্রিজটা কিছুটা দেখার মতো, তবে তাও জরাজীর্ণ। তবে হ্রদে দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন ওয়াটারবোট বা বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারলে পার্কের সৌন্দর্য আরও বাড়বে।' 

স্থানীয় তাওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইকোপার্ক প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর। এটি একএক সময়ে একএক রকম প্রাকৃতিক রূপ ধারণ করে। তাই দর্শনার্থীদের আনাগোনা থাকে বেশি। তবে প্রতিবছরই বনবিভাগ গেইট ও গাড়ি পার্কিং ইজারা দিয়ে লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে।

কৃষি ও উপজেলা এলজিইডি বিভাগ সেচ প্রকল্পের পানি বিক্রয় করে লাখ লাখ টাকা আয় করে। অথচ বাঁশখালী ইকো পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কোনো সংস্কার নেই। সবাই যে যার মতো লুটেপুটে খাচ্ছে।’

পার্কের ইজারাদার কামরুল ইসলাম বলেন, গত রমজানের আগে ইকোপার্কের সড়কের টেন্ডার হয়েছে। অথচ ঠিকাদার এখনো পুরোদমে কাজ শুরু করেনি। রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রেখেছে। যার কারণে গাড়ি নিয়ে দর্শনার্থীরা আসতে পারছেন না। যারা আসছেন তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হলে ইকোপার্কে দর্শনার্থী সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে। এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পার্কের বিভিন্ন স্থাপনা সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ বিন মাহমুদ বলেন, ‘ইকোপার্ক সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। সড়কের কাজ দ্রুতই চলছে। শিগগিরই ইকোপার্ক সড়ক সংস্কার কাজ শেষ হবে।'

বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইসরাঈল হক বলেন, 'পার্ক সংস্কারে বনবিভাগের পক্ষে থেকে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যানের কাজ চলছে। সেটা বাস্তবায়ন হলে পার্কটি নান্দনিক সৌন্দর্যে রূপ নিবে। এছাড়া ইকোপার্কে বিনিয়োগ প্রয়োজন। পার্কের নিজস্ব কোনো আয় নেই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কয়েকবার পার্কের সংস্কার করা হয়েছে।'

NJ
আরও পড়ুন