বাংলাদেশের অন্যতম সমুদ্র সৈকত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত একসাথে দেখার অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এই সৈকত এক বিশেষ আকর্ষণ। কিন্তু সরকারি উদ্যোগের অভাবে পর্যটন খাতের প্রকৃত সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

এই সমুদ্র সৈকতকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসছেন এই জনপদে। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে এখানে শত শত আবাসিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এই খাতটি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির অন্যতম বড় উৎস হতে পারে। তবে এজন্য প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা ও সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পিত উন্নয়ন, আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ, পর্যটনবান্ধব নীতিমালা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা গেলে কুয়াকাটা থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারে।
পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের দাবি, কুয়াকাটাকে ঘিরে যেসব উন্নয়ন জরুরি সেগুলো হলো—ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৬ লেন সড়ক নির্মাণ, সৈকতের ভাঙন রক্ষায় টেকসই বাঁধ ও পরিকল্পনা, মেরিন ড্রাইভ সড়ক বাস্তবায়ন, স্থায়ী পিকনিক স্পট, স্থায়ী মার্কেট, দর্শনীয় স্থানে সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা, ক্রীড়া স্টেডিয়াম, হেলিপোর্ট এবং ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ট্রেন চালু করা, বাৎসরিক সরকারি অর্থ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশু পার্ক,বিনোদন কেন্দ্র। এগুলো বাস্তবায়ন হলে পর্যটন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।

পর্যটন ব্যবসায়ী মাঈনুল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটা শুধু একটি সৈকত নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ক্ষেত্র। পর্যটনকে ঘিরে হোটেল, রিসোর্ট, খাবার হোটেল, পরিবহন ও স্থানীয় ব্যবসা—সব কিছুই বিকশিত হবে। এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লায়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ জানিয়েছেন, আবাসিক হোটেলগুলোকে মানসম্মত করতে সরকারি পর্যায়ে সহজ শর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও পর্যটন খাতে কর ছাড় দিলে বিনিয়োগ আরও বাড়বে। এছাড়া নিরাপত্তা ও পর্যটনবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে সরকার আরো বোশি রাজস্ব পেতে পারবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষক, মাইনুল ইসলাম মান্নান মনে করেন, কুয়াকাটায় আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো ও সেবাখাত গড়ে তোলা গেলে বিদেশি পর্যটকও বাড়বে কয়েকগুণ। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ খুলবে, যা সরাসরি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। এবং কুয়াকাটা ভাঙ্গন রক্ষায় সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে, সমুদ্রের কাছ থেকে সৈকতকে রক্ষা করতে পারলে টিকে যাবে সরকারের বড় রাজস্ব আয়ের স্থান।

পর্যটকরা অভিযোগ করেন, কুয়াকাটায় পর্যাপ্ত বিনোদনকেন্দ্র, নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন সৈকত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং তথ্যকেন্দ্রের অভাব রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান করা গেলে কুয়াকাটা হবে দেশের দ্বিতীয় কক্সবাজার, এমনকি আরও সমৃদ্ধ।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন আহমেদ বলছেন, সরকারি পরিকল্পনার মাধ্যমে কুয়াকাটাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে রাজস্ব আয় শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, পুরো দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
কুয়াকাটা যদি সঠিকভাবে উন্নয়ন করা হয়, তবে এটি কেবল একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়—বরং হবে জাতীয় রাজস্বের অন্যতম বড় উৎস।
