বর্তমান দ্রুতগতির জীবনে আমাদের মনের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি হয়। অফিসের ডেডলাইন, বাসার দায়িত্ব, ব্যক্তিগত টেনশন, সম্পর্কের টানাপোড়েন সব মিলিয়ে অনেকেই প্রায়ই মানসিক ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তবে এই চাপ কমানোর জন্য শুধু মেডিটেশন বা বিশ্রামই নয়, খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সচেতন খাওয়ার অভ্যাস, সঠিক পুষ্টি উপাদান এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা। এই তিনটি বিষয় মিলে আমাদের মানসিক চাপ অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে। চলুন জেনে নিই কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক-
মনোযোগ দিয়ে খাওয়া (Mindful Eating)
অনেকেই খাওয়ার সময় টিভি দেখা বা ফোন স্ক্রল করার অভ্যাসে অভ্যস্ত। এতে শরীর খাবার পেলেও মন সেই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। অথচ মনোযোগ দিয়ে খাওয়া মানে হলো খাবারের গন্ধ, স্বাদ, রং এবং টেক্সচার উপভোগ করা, চিবিয়ে খাওয়া এবং শরীরের ক্ষুধা বা পরিতৃপ্তির সংকেত বোঝা।
The Clinicians Journal-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, mindful eating আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের parasympathetic অংশকে সক্রিয় করে, যা স্বাভাবিকভাবেই চাপ কমাতে সাহায্য করে।
পরামর্শ: খাওয়ার সময় শুধু খাওয়ার জন্যই সময় দিন। ডিভাইস দূরে রাখুন।
চিনি ও ক্যাফেইন চাপের সময় এড়িয়ে চলুন
চিনিযুক্ত খাবার বা ক্যাফেইনসমৃদ্ধ কফি-চা তাৎক্ষণিক শক্তি দিলেও কিছু সময় পরই এই প্রভাব কমে গিয়ে ক্লান্তি, মুড সুইং বা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে মানসিক চাপের সময় শরীর আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
Children’s Hospital Colorado বলছে, এই খাবারগুলোতে শরীর অল্প সময়ের জন্য হাই হয়ে পরে আবার দ্রুত ডাউন হয়ে যায়, যা মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে।
পরামর্শ: ক্যাফেইনের পরিবর্তে হার্বাল চা বা পানি, আর মিষ্টির পরিবর্তে ফল বা প্রাকৃতিক মিষ্টিজাত খাবার বেছে নিন।
জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম ও ওমেগা-৩: উদ্বেগ কমানোর সহায়ক
বিশ্বখ্যাত Harvard Health এর মতে, কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদান আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। সেগুলো হলো:
- জিঙ্ক: কাজু, ঝিনুক, কলিজা, ডিমের কুসুম
- ম্যাগনেসিয়াম: পালং শাক, বাদাম, বীজ, গোটা শস্য
- ওমেগা-৩: স্যামন মাছ, ফ্ল্যাক্সসিড, আখরোট
২০১১ সালে মেডিকেল ছাত্রদের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, ওমেগা-৩ গ্রহণ করলে উদ্বেগের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
পরামর্শ: প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তত একটি ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার রাখার চেষ্টা করুন।
শুধু ব্যায়াম বা মেডিটেশন নয়, সঠিক সময়ে সঠিক খাবার খাওয়ার মাধ্যমেও মানসিক চাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তাই আজ থেকেই শুরু করুন খাবারে সচেতনতা, অভ্যাসে শৃঙ্খলা এবং নিজেকে ভালো রাখার প্রতিজ্ঞা।
