ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ ছিল এক অবিশ্বাস্য ফুটবল নাটক। সাত গোলের রোমাঞ্চ, ওঠানামা করা ভাগ্য, আর শেষ মিনিটের হৃদয়ভাঙা পরিণতি-সব মিলিয়ে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ যেন স্বপ্ন দেখেই জেগে উঠল বাস্তবের আঘাতে। শেষ মুহূর্তে রাফায়েল মার্কিজের হ্যাটট্রিক গোলে ৪-৩ ব্যবধানে হারল জামাল ভূঁইয়ার দল।
এক রুদ্ধশ্বাস রাত। সাত গোলের রোমাঞ্চ, উত্তেজনায় ভরপুর ৯০ মিনিট, আর শেষ মুহূর্তের গা শিউরে ওঠা এক গোল—সব মিলিয়ে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের এই ম্যাচটি হয়ে রইল বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে আরেকটি হৃদয়ভাঙা অধ্যায়।
হংকংয়ের বিপক্ষে জয় মানেই ছিল টিকে থাকার আশা। সেই আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী। মাত্র ১৩ মিনিটেই তার ডান পায়ের বাঁকানো ফ্রি-কিকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। গ্যালারিতে তখন উচ্ছ্বাস, পতপত করে উড়ছে লাল-সবুজ পতাকা।
কিন্তু প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সেই আনন্দে ছায়া ফেলে হংকংয়ের সমতা ফেরানো গোল। কর্নার থেকে বল ঘুরে এসে এভারটনের আলতো স্পর্শেই জালে জড়ায়—স্কোরলাইন ১–১।
বিরতির পর আরও ধাক্কা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই নিজের অর্ধে বিপজ্জনক এক ব্যাকপাস দেন সোহেল রানা জুনিয়র। বলের গতি ছিল না, সেটি কুড়িয়ে নিয়ে বদলি খেলোয়াড় রাফায়েল মার্কিজ মিতুল মারমাকে পরাস্ত করে দলকে এগিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর আবারও তার পা থেকে আসে গোল, এবার এভারটনের পাস থেকে নিখুঁত শটে। তখন বাংলাদেশের সমর্থকেরা নিঃশব্দ। স্কোর ৩–১।
তবুও হাল ছাড়েনি বাংলাদেশ। কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা একসঙ্গে নামালেন জামাল ভূঁইয়া, শমিত সোম, ও ফাহামিদুল ইসলামকে। পরিবর্তনের পর বদলে যায় খেলায় গতি। ৮৪ মিনিটে গোল করেন শেখ মোরসালিন, জামালের ফ্রি কিকে সৃষ্ট গোলমাল থেকে রিবাউন্ডে জালে জড়ান বল।
আরও নাটক অপেক্ষা করছিল যোগ করা সময়ে। কর্নার থেকে মোরসালিনের বল ছুঁয়ে হংকংয়ের ডিফেন্ডারের মাথা, আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শমিত সোম মাথা ছুঁইয়ে ফেরান বাংলাদেশকে সমতায় ৩–৩! গ্যালারি তখন স্বপ্ন দেখছে, হয়তো এবার হার নয়, এই ম্যাচ থেকে পাওয়া যাবে আশার দিশা।
কিন্তু ফুটবলের নিষ্ঠুর বাস্তবতা অপেক্ষায় ছিল আর মাত্র এক মিনিট দূরে। রক্ষণভাগের আরও এক ভুলে বল পেয়ে যান সেই রাফায়েল মার্কিজ, হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে বাংলাদেশের বুক ভেঙে দেন তিনি। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই স্কোরবোর্ডে লেখা থাকে হংকং ৪, বাংলাদেশ ৩।
