বিয়ে শুধু ভালোবাসার বন্ধন নয়- এটি জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। দুই ভিন্ন মানুষ, দুইটি আলাদা পরিবেশ ও চিন্তাধারা একসঙ্গে মিশে যায় একটি নতুন সম্পর্কের বাঁধনে। কিন্তু অনেক সময় পরিবার বা সমাজের চাপে আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে নিজের মানসিক, আবেগীয় বা আর্থিক প্রস্তুতির কথা ভুলে যাই। ফলে সম্পর্কের শুরুতেই দেখা দেয় ভুল বোঝাবুঝি, হতাশা বা অস্থিরতা।
তাই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবচেয়ে জরুরি হলো- নিজেকে যাচাই করা। আপনি কি মানসিকভাবে প্রস্তুত? দায়িত্ব নিতে পারবেন? ভবিষ্যৎ সঙ্গীর সঙ্গে মতের মিল আছে? এসব প্রশ্নের সৎ উত্তরই বলে দেবে, আপনি সত্যিই বিয়ের জন্য প্রস্তুত কি না।
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক বিয়ের প্রস্তুতির বিষয়ে-
আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা
বিয়ে করতে হলে আপনাকে আবেগীয় দিক থেকে স্থির ও সহনশীল হতে হবে। সঙ্গীর সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলা, মতবিরোধ হলে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা এবং সঙ্গীর ব্যথায় সমব্যথী হওয়ার মতো গুণ আপনার মধ্যে আছে কি না, বুঝতে চেষ্টা করুন। কারণ, অল্পতেই রেগে যাওয়া বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।

পরিণত আচরণের সংকল্প
যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং প্রয়োজনে নতুন পরিস্থিতি থেকে কিছু শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। একজন দায়িত্বশীল প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এই মানসিকতা ধারণ করেন।
এই মানসিকতা না থাকলে বিয়ের পর জীবনের নানান পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়ে আপনি মুশকিলে পড়তে পারেন। ‘আমি কখনও ঘরের কাজ করিনি, এসব আমার কাজ নয়’- এমন ভাবনা মনের ভেতর থাকার অর্থই হলো আপনি বিয়ের জন্য প্রস্তুত নন।
সম্ভাব্য সঙ্গীর সঙ্গে মতের মিল
আপনি যাকে বিয়ে করতে চলেছেন, তার সঙ্গে আপনার বিশ্বাস, আদর্শ ও জীবনের উদ্দেশ্যের মিল থাকা খুবই জরুরি। সম্ভাব্য সঙ্গীর সঙ্গে আপনার আকাঙ্ক্ষা, চাহিদা ও লক্ষ্যের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। তার কথাও শুনুন। এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন, আপনি এই মানুষকে বিয়ে করতে কতটা প্রস্তুত।

সেই মানুষের পেশা, খাদ্যাভ্যাস ও শখের মতো বিষয়গুলো সম্পর্কেও জানুন। সবকিছুতেই মিল পাওয়াটা অসম্ভব। কিন্তু বিয়ের পর দুজনের কারও বিশ্বাস বা আদর্শে যাতে আঘাত না আসে, সেদিকটা আগেই নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
নিজের সম্পর্কে সচেতনতা
নিজের দোষ–গুণের দিকে মনোযোগী হোন, নিজেকে জানুন। আপনার দোষগুলো বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, ভেবে দেখুন। নিজের ভেতর ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন। নিজের দুর্বলতা, শক্তি ও অভিজ্ঞতার আলোকে যাচাই করুন, বিয়ের মতো দায়বদ্ধতার ভার নিতে আপনি প্রস্তুত কি না।
সহযোগিতামূলক আচরণ
ভেবে দেখুন, পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি তো বটেই, সামাজিক সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রেও আপনি অন্যের প্রতি সহযোগী আচরণ করেন কি না। মনে রাখবেন, বিয়ের পর জীবনসঙ্গী ও তার পরিবারের প্রতি আপনার কিছু কর্তব্য থাকবে, তাদের সহযোগিতাও করতে হবে নানাভাবে। এসব বিষয়ে আপনি প্রস্তুত আছেন কি না, যাচাই করে নিন।

আর্থিক প্রস্তুতি
বিয়ের পর নতুন সংসারের আর্থিক দিকগুলো কীভাবে সামলাবেন, তা ভেবে রাখুন। যার সঙ্গে আপনার বিয়ে হচ্ছে, তার জীবনধারার খরচ সম্পর্কেও ধারণা রাখুন। যখনকার ব্যাপার, তখন দেখা যাবে- এমনটা ভাবা উচিত নয়।
সংসার শুরু করার পর সব মিলিয়ে কেমন টাকাপয়সা প্রতি মাসে খরচ হতে পারে, সেদিকটা বুঝে নিন। একই সঙ্গে আপনি সেই পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন কি না, সেটাও ভেবে দেখুন।
জীবনে স্থায়ী উন্নতি করতে মেনে চলুন এই ৩টি নিয়ম