পরের জমিতে কাজ কইরি, শীতের মধ্যে খেজুর গাছ লাগাইয়ি দুই ছাওয়ালের জন্যি খরচ করিচি। বড়ডা গত বছর চাকরি পাইছে। ছোট ছাওয়াল লেখাপড়া শিকপি, বড় অফিসার হবি এই আশায় কখনো ধার করে, কখনো সুদের উপরে লিয়েও টাকা পাটাইচি। ছাওয়ালও বইলতো, আমি চাকরি পাইলে তোমারে আর এসব কাজ করতে দিব না। কিন্তু আমার কষ্ট আর দূর হইল না।’ চাপা কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলেছেন নাটোরের কাটাশকোল গ্রামের দিনমজুর আব্দুস সাত্তার মৃধা। তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী রাবির গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেন মৃধার বাবা।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাবি শিক্ষার্থী মুরাদ মারা যান। এদিকে, মুরাদের মৃত্যুর খবর সইতে না পেরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চাচাতো বোন দোলেনা বেগমের (৫২) মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি মুরাদ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে পাঁচ দিন চিকিৎসার পর সুস্থ না হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ডেঙ্গুর পাশাপাশি তার লিভার ও কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে সহপাঠীরা তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেন।
মুরাদের খালাতো ভাই আলমগীর জানান, বাড়ির ভিটাসহ মাত্র বিঘাখানেক জমি আছে মুরাদের বাবার। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি সেখানেই থাকেন। মুরাদের বাবা পেশায় দিনমজুরের কাজ করে ছেলের লেখাপড়াসহ কোনো রকমে নিজেদের সংসার চালান।
মুরাদের বাবা জানান, মুরাদ মাত্র এক মাস আগে গণিত বিভাগ থেকে অনার্স পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হন। সেই খবর পেয়ে আনন্দে অভাবের মাঝেও তিনি সবাইকে মিষ্টি কিনে খাইয়েছিলেন।
জোয়াড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে মুরাদকে দাফন করা হয়েছে। দরিদ্র বাবার মেধাবী সন্তানের এ মৃত্যু সত্যিই খুব কষ্টের।
