ঢাকা
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

কোটি টাকার শ্যাওলা বিক্রি হয় যে হাটে

আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১৩ পিএম
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, শ্যাওলা, কচুরিপানা মূল, ট্যাপ পনা, দুলালী লতা বিক্রি হয়। তবে এটি প্রচলিত কোনো বাজারে নয়। এখানে একেকটি নৌকা হয়ে ওঠে একেকটি দোকান। কোনো ভাসমান হাটের কথাই বলছি।
 
প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো দেশের বৃহত্তম এই ভাসমান বাজারটি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটায় বেলুয়া নদীর মোহনায় অবস্থিত। ঐতিহ্যবাহী এই বাজারের একটি অংশ হলো শাওলার দোকানগুলো।
 
প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নদীর বুক চিরে বসে হাট।
 
সরেজমিন বেলুয়া নদীর ভাসমান বাজারে গেলে জানা যায়, এই বাজারেই আসে পাশে থেকে সংগ্রহ করা এই শ্যাওলা, কচুরিপানা মূল, ট্যাপ পনা, দুলালী লতা। তারপর এগুলো বিক্রির জন্য নৌকায় করে আনা হয় এই ভাসমান হাটে। অবাক করার মতো কাণ্ড হলো এগুলো বিক্রিও হয় বেশ ভালো দামে।স্থানীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার একটি অংশ সারাবছর পানির নিচে ডুবে থাকে। তাই এখানে চাষাবাদের একমাত্র ভরসা হলো ভাসমান পদ্ধতি। আর এগুলো ব্যবহার করা হয় ভাসমান কৃষি কাজে।
 
ভাসমান পদ্ধতিতে এসব শ্যাওলা, কচুরিপানা মূল, ট্যাপ পনা, দুলালী লতা দিয়ে তৈরি হয় বেড। সেসব বেডে রোপণ করা হয় সবজি চারা। এছাড়া বিক্রি হওয়া ট্যাপ, পনা, শ্যাওলা পেঁচিয়ে তৈরি করা হয় ‘ম্যাদা’। ম্যাদাতেই চারা জন্মানোর জন্য রোপণ করা হয় বীজ। এভাবেই শ্যাওলা বিক্রি করছেন এখানকার লোকজন।
 
ট্যাপ-পনা বিক্রি করতে আসা জুলফিকার জানান, শুক্রবার সকালে আমার নৌকাটি বোঝাই করেছি যুগিয়া এলাকা থেকে। রাতে বাড়ি থেকে হাটে রওনা দিয়ে ভোর পৌঁছাই। আমার নৌকা ২৫০০ টাকা চেয়েছি, বিক্রি করেছি ১৮০০ টাকা বিশারকান্দি এলাকায়। তার বাড়িতে দিয়ে আসতে হবে।
 
তিনি বলেন, আমি সারাবছর এই ব্যবসা করি। বছর শেষে কিছু টাকাও রাখতে পারি। এ ব্যবসায় কোনো চালান লাগে না।
এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় শ্যাওলা নিচ্ছেন কবির শেখ। জানতে চাইলে তিনি জানান, ২০০ টাকা আঁটি কিনেছেন। নিয়ে যাবেন সোনাপুর গ্রামে। তিনিও বিক্রি করবেন। এক নৌকা কিনে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করবেন, তাতে ভালো লাভ হবে।
 
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, চারা চাষে শ্যাওলা, কচুরিপানা মূল, ট্যাপ, পনা, দুলালী লতা প্রয়োজন। এগুলো ছাড়া চারা বানানো যায় না। এগুলো যেন এ অঞ্চলের স্বর্ণ। অনেকে এগুলো বিক্রি করে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করছে।
 
নাজিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রাসারণ কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান মিল্টন জানান, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য শ্যাওলা, কচুরিপানা মূল, ট্যাপ পনা, দুলালী লতা দিয়ে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন কৃষকরা। এগুলোর গুণাগুণ অনেক, যা জৈব সার হিসাবেও চাষিরা ব্যবহার করে থাকেন। এই উপাদানগুলোর কারণে প্লাবিত এ অঞ্চলের চারার মান ভালো, যার চাহিদা দেশজুড়ে।
NJ
আরও পড়ুন