চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিএনপির ৩১ দফার রূপরেখা বাস্তবায়নে জনমত গঠন ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ ও ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মফিজুর রহমান আশিক।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ির নাপোড়া বাজার ও প্রেমবাজারে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ও ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালান তিনি।
এ সময় মফিজুর রহমান আশিক বলেন, আমাদের নেতা আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান ঘোষণা করেছেন বিএনপি সরকার গঠন করলে দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। এই কার্ডগুলো বাড়ির মায়েদের নামে ইস্যু করা হবে, যা নারীর মর্যাদা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাই বিএনপি সরকারে এলে আমার নির্বাচনি এলাকা বাঁশখালীর পিছিয়ে পড়া নারীদের সবার আগে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর থেকে গড়ে ওঠা একজন ছাত্রনেতা। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে অসংখ্যবার গুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমি জুলাই আন্দোলনের একজন সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে বাঁশখালীতে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে এসেছি। কোনো আন্দোলন সংগ্রামে অংশ না নিয়ে, শুধু বাপ-দাদার নাম ভাঙিয়ে বিএনপির মনোনয়ন কেউ পেতে পারে না। আ. লীগের সেই সব চেয়ারম্যান- ডামি এমপিরা, যারা তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার ফাঁসি দাবি করেছে ও বারবার কটূক্তি করেছে—তাদের যেসব বিএনপি নেতা সেফ এক্সিট দিয়েছে বা মামলার আসামি হতে দেয়নি, তারা কোনোভাবেই বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য নয়।

মফিজুর রহমান বলেন, জুলাই আন্দোলন ছিল বাঁশখালী তথা দেশের বিভিন্ন এলাকার পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি ভেঙে ফেলা বা প্রশ্নবিদ্ধ করার একটা বড় আন্দোলন। এই আন্দোলনের পরে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি ভেঙে চুরমার হয়েছিল। ভারতে পালিয়ে গেছে হাসিনা ও তার দোষররা। ঠিক একইভাবে কেউ এবার বাঁশখালীতে বাবা-দাদার পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে মনোনয়ন নিয়ে এমপি হবে- ধারণা করলে সেটা ভুল হবে। জুলাই আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে। আগামীতে বাঁশখালীতে আর কোন পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি চলবে না।
তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার বিরোধী যতগুলো আন্দোলন হয়েছিল, সবগুলোতে আমি অংশগ্রহণ করেছি। আমি দুইবার গুমের শিকার হয়েছি। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ফ্যাসিস্ট বাহিনীর হাতে অসংখ্যবার নির্যাতিত হয়েছি। তারপরও দল ছেড়ে যায়নি। এই দলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি। অনেকে গুমের শিকার হয়ে পরে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু আমি গুমের পরও রাজনীতি করেছি। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। আমি হাসিনার জঙ্গি নাটকের মুখোশ উম্মোচন করেছিলাম। যার কারণে হাসিনার সরকার আমাকে গুম করেছিল। নির্মম নির্যাতন করেছিল। তারপরও আমি দমে যায়নি।
আশিক বলেন, বাঁশখালী প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি উপজেলা। এই উপজেলার পূর্বে পাহাড় ও পশ্চিমে বিশাল সমুদ্র সৈকত। দুঃখের বিষয় বাঁশখালীকে এখনো পর্যটন উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের মোহনা খাটখালীকে নদী বন্দর হিসেবে রূপ দেওয়া হলে বাঁশখালী তথা পুরো চট্টগ্রামের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। আমার বাঁশখালীর গ্রামাঞ্চলে অসংখ্য রাস্তাঘাট রয়েছে৷ অথচ স্বৈরাচারী সরকার সেগুলোকে কোন সংস্কার করেনি। উল্টো প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে হাসিনার এমপি-চেয়ারম্যানরা। এলজিআরডিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমি অনুরোধ করবো, আপনারা বাঁশখালীর সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করেন।
এ সময় পথচারী ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা শুধু একটি রাজনৈতিক দল বা জোটের কর্মসূচি নয়, এটি দেশের মানুষের বাঁচার অধিকার, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র। ৩১ দফায় রাষ্ট্র মেরামতের সব উপাদান আছে। এটি নিঃসন্দেহে এদেশের মানুষের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তাই আমি সকল রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, জনগণ ও ছাত্রসমাজকে বলব, আসুন আমরা সবাই ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ হই।
আশিক বলেন, আমাকে যদি বাঁশখালীতে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে আমি বাঁশখালীকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো। এই এলাকার অবিচার, নিপীড়ন, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই চালিয়ে যাব। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন প্রিয় বাঁশখালী হবে আশার, ন্যায়ের ও মানবতার আলোকবর্তিকা। পিছিয়ে পড়া বাঁশখালীকে এগিয়ে নিতে যা যা প্রয়োজন, তা করতে আমি নিজেকে সপে দিতে চাই।
এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা বিএনপি নেতা আবুল মনছুর সিকদার, উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জালাল উদ্দীন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আশেক উল্লাহ, মো. ইমরানুল হক, উপজেলা যুবদল নেতা জুনাইদুল করিমসহ উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বাঁশখালী ইকোপার্ক 