ঢাকা
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

৪৮ ঘন্টায় পঞ্চগড়ে ১৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড

আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বর্ষায় দেখা মেলেনি বৃষ্টির ঢল। তবে আষাঢ়-শ্রাবণের পর শেষ ভাদ্রে গত ২ দিনে দেখা মিলেছে মুষলধারেবৃষ্টি। এতে বৃষ্টির পানিতে ভরতে শুরু করেছে খাল-বিল ও পুকুর। নদীগুলোতে বাড়তে দেখা গেছে পানি।

রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘন্টায় ১৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করেছে জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়ায় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কার্যালয়।

গতকাল দুপুর থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে চাষিদের মাঝে। মকবুল হোসেন, হোসেন আলী ও কামাল হোসেনসহ কয়েকজন চাষি জানান, ২ দিনের বৃষ্টিতে ক্ষেতে অনেক পানি জমেছে। খুব ভালো বৃষ্টি হয়েছে। এরকম বৃষ্টি আষাঢ়-শ্রাবণেও দেখা যায়নি। ওই সময় বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়েছিল।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর মধ্যে। তবে স্থানভেদে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ভিন্ন হয়। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন আসছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাষ্পীভবনও বাড়ছে। ফলে বৃষ্টিপাতের তারতম্য দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের ধরন ও সময় এলাকাভেদে পাল্টে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে ওইসব এলাকার কৃষি খাতেও।

কৃষিখাতে অনাবৃষ্টির বিরূপ প্রভাবে বিপাকে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে বিপাকে পড়তে দেখা গেছে এ অঞ্চলের আমন, পাট ও চা চাষিদের। বৃষ্টিনির্ভর আউশ ধান নিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকতে দেখা গেছে তাদের।

চা শিল্প অঞ্চল হিসেবে চাষিদের চা বাগানে দেখা দিয়েছে পচন রোগ। বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ, খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে চা উৎপাদন কমে যাওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন এ অঞ্চলের চা চাষিরা।

বর্ষার সময়ে থই থই পানি থাকার কথা থাকলেও খাল, বিল, নদীনালা ও পুকুরগুলো তেমন পানি দেখা যায়নি। পুকুর, বিল ও জলাশয়ের অল্প পানিতেই বাধ্য হয়েই মাছ অবমুক্ত করতে দেখা গেছে সরকারি মৎস্য দপ্তরগুলোতে।

তেঁতুলিয়া প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জুনে ৮২৯.৩ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। ২০২১, ২২, ২৩, ২৪ সালের জুনে যথাক্রমে ৪২৩, ১০৭২, ৯৫৬.৭ ও ১১৫১.১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সবশেষ চলতি বছরের জুনে ৪৪৯.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ওই বছরগুলোর জুলাইয়ে যথাক্রমে ১১২৮.৫, ৭৮৯, ৪৯১, ৮৩৬.৩, ৭৭৭.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত  ৪৯ মিলিমিটার, ৭ সেপ্টেম্বর ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় একেবারেই কম।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ জানান, গতকাল সন্ধ্যা থেকে গত ২৪ ঘন্টায় ৮২ মিলিমিটার ও আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ৪৮ ঘন্টায় ১৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলো এ জেলায়। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌস বলেন, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কৃষিখাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এরকম নয়। বর্ষার সময় আমন মৌসুম, সে সময় বৃষ্টি হয়েছিল সত্য। তবে প্রযুক্তি নির্ভরতা হওয়া সেচের মাধ্যমে চাষিরা আমন লাগিয়েছেন। এখন বৃষ্টি হচ্ছে, এটা কৃষকদের উপকার হচ্ছে। তবে চাষাবাদ সেচ নির্ভর হয়ে পড়ায় খরচও বেড়ে যায়।

NJ
আরও পড়ুন