আশ্বিনের শুরুতেই দেখা মিলছে কুয়াশা ঢাকা প্রকৃতি। কুয়াশার আবরণ দেখে দুয়ারে শীতের কড়া নাড়তে শুরু করেছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রায়ই ভোরে দেখা গেছে ঘন কুয়াশার চাদর।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে কুয়াশার চাদরে ঢাকা। শেষ ভাদ্র মাসের টানা বৃষ্টিতে পরিবেশ ঠান্ডার সাথে আশ্বিনের শুরুতে ভোরে এমন কুয়াশা বলে দিচ্ছে উত্তরের এ জেলায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে শীত।
জেলার বেশ কিছু এলাকায় দেখা যায় কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। এতে শহর ও গ্রামীণ জনপদের সড়কগুলোতে বিভিন্ন যানবাহনকে চলতে দেখা গেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। যদিও দিনে ও রাতে তাপমাত্রায় গরম অনুভূত হলেও শেষ রাতে পরিবেশ যেন শীতল হয়ে আসে। আর শীতের অনুভূতি জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।
স্থানীয়রা জানান, ভোরে বেশ কুয়াশা পড়তে দেখা গেছে। আশ্বিন মাসেয় বৃষ্টির ঝড়ঝাপ্টায় শীতের আগমন ঘটতে থাকে। কার্তিক পড়তেই দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করে শীতের আমেজ। এখন আর রাতে ফুল স্পিডে ফ্যান চালানো যাচ্ছে না। রাতে কাথা/পাতলা কম্বল জড়াতে হচ্ছে শরীরে। ভোর পর্যন্ত শীতের পরশ অনুভব হচ্ছে। তবে ঘন কুয়াশা এবং তীব্র শীত আসতে দেরি আছে।

জানা যায়, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় শীতের জেলা। মানচিত্রের উত্তর কোণে জিরো পয়েন্টে অবস্থিত দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন স্পট চারদেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দরের জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার, আকাশ পথে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার, দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার এবং চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার।
এ অঞ্চল থেকে প্রতিবেশী ভারত ও নেপাল কাছে থাকায় দেখা মেলে পৃথিবীর সুউচ্চ দুই পর্বতমালা হিমালয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছে থাকার কারণেই বয়ে আসা পাহাড়ি হিমেল হাওয়ায় শীতকালে নেমে যায় তাপমাত্রার পারদ। ফলে এ অঞ্চলে বছরের গরমের তুলনায় শীতের আমেজ বেশি থাকে। আশ্বিনের ঝরা বৃষ্টি ও বাতাসে শুরু হয় শীতের আগমনি। কার্তিকেই শুরু হয় শীতের আমেজ।
শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দিক থেকে ধেয়ে আসা হিমালয়ের বায়ুতে বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। অগ্রহায়ণ-পৌষ ও মাঘ মাসে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত যেন জিরো ডিগ্রিতে নেমে আসে তাপমাত্রা।
২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল গত ৩০ বছরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, উত্তর গোলার্ধ থেকে আসা শীত বাংলাদেশ বা এ অঞ্চলে সরাসরি ঢুকতে পারে না। হিমালয় থেকে আসা বায়ুর একটি অংশ কাশ্মীর, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের একাংশ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। গরমের দিনে দিল্লির তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে বাংলাদেশে আসতে থাকে। আবার শীতকালে দিল্লির অতি শীত ধীরে ধীরে কমতে কমতে বাংলাদেশে আসে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই দেশের মৌলভীবাজার ও চুয়াডাঙ্গা ও পঞ্চগড় এ ৩টি জেলায় শীত বেশি হয়ে থাকে।
বিশেষ করে পঞ্চগড়ের উত্তরে খুবই কাছাকাছি দূরত্বে রয়েছে নেপালের হিমালয় পর্বতমালা ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকা। হিমালয়ে শীতকালে রীতিমতো বরফ পড়ে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনে শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বিশ্বের জলবায়ুর ধরনে পরিবর্তন ঘটার পাশাপাশি বদলে যাচ্ছে মহাসাগরীয় আবহাওয়ার আচরণও। ফলে তাপমাত্রার চরম ওঠা-নামা ঘটছে। বদলে যাচ্ছে ঋতু ও আবহাওয়ার সেই চিরচেনা বাক।
জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, মৌসুমি বায়ুর নিস্ক্রিয়তার কারণে হঠাৎ করে দেখা দিচ্ছে কুয়াশা। এটা বেশি সময় থাকে না।
আজ সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ ছিল ২৯.৯ ডিগ্রি। সে হিসেবে এ অঞ্চলে শীতের আগমনী বার্তা বোঝা যাচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
প্রাচীন নিদর্শন দেখার গন্তব্য হতে পারে পঞ্চগড়