ঢাকা
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

চবির হলগুলো ছিল ছাত্রলীগের অস্ত্র-মাদকের গোডাউন

আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪০ পিএম

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলে শিক্ষার্থী থাকবে, বই ও অনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বরাবরের মতোই ব্যতিক্রম দেশের বৃহৎ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। বছরজুড়ে হলগুলোতে প্রায় রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতা লেগেই থাকতো। তবে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। বৈধভাবে হলগুলোতে ছিল না কোনো আসন বরাদ্দ, ছিল অস্ত্র ও মাদকের গোডাউন, অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এতে করে স্বাভাবিক শিক্ষা ব্যাহত হতো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে উঠতে হলে ছাত্রলীগের কর্মীর ট্যাগ লাগাতে হতো। তবে এতেই নিষ্কৃতি ছিল না তাদের। চবি ছাত্রলীগের ১১টি গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত থাকায় আধিপত্য বিস্তার আর ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে প্রায়ই মারামারিতে জড়াতো। এসব সংঘর্ষে তাদের হাতে দেখা যেত ধারালো সব দেশীয় অস্ত্র।

ছবি: খবর সংযোগ

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলগুলোতে তল্লাশি করে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কয়েক দফা হলগুলোতে রেড দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও হল প্রশাসন। এতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মাদকের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার এসব অস্ত্র নিরাপত্তা দপ্তরে হস্তান্তরের পর তালিকা করে অস্ত্রাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

নিরাপত্তা দপ্তরের প্রস্তুত করা ওই তালিকায় অনুযায়ী, অভিযানে ১০৭টি রামদা, চারটি চাপাতি, ৬৬টি ছোট ছুরি, ৭২টি ক্রিকেট স্ট্যাম্প, ২২টি হেলমেট, চারটি পেট্রোল বোমা, ১০টি চকলেট বোমা, একটি প্যারাসুট রকেট বোমা, ৪৪টি মদের খালি বোতল, ১০টি গাঁজা সেবন কলকি, পাঁচটি ল্যাপটপ, একটি পুলিশ ক্যাপ, ৯ কেস কোমল পানীয়ের কাচের বোতল পাওয়া গেছে। এছাড়া পেট্রোল বোমা তৈরির সরঞ্জামও পাওয়া গেছে।

এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ সিভয়েসকে বলেন, বিগত ১৫-১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সন্ত্রাসীদের আতুরঘরে পরিণত হয়েছিল। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা একটি ভয়ের রাজত্ব করে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে নিজেরদের ছায়া তলে নিয়ে দল ভারী করেছিল। এতে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। নতুন বাংলাদেশে কোনো ভয়ের পরিবেশ থাকবে না। সন্ত্রাসের স্থান থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্ত্র ও মাদকমুক্ত করতে প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই।

চবির নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) মো.গোলাম কিবরিয়া বলেন, যৌথ অভিযানে প্রক্টরিয়াল বডি,হল প্রশাসন থেকেত জব্দ করা অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিরাপত্তা দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আমরা এগুলো তালিকা করে আমাদের অস্ত্রাগারে সংরক্ষণ করেছি।

 ছবি: খবর সংযোগ

জানতে চাইলে চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড.তানভীর মো.হায়দার আরিফ বলেন, উপাচার্য মহোদয় প্রক্টরিয়াল বডিকে নিয়োগ দেওয়ার পরপরই বেশ কিছু দিক নির্দেশনা দেন। যার মধ্যে একটা অন্যতম হলো শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করা। সেই দিক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রক্টরিয়াল বডি বেশ কিছু নিয়মিত কর্ম সম্পাদন করে চলেছে। যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ধকার এলাকাসমূহকে আলোকোজ্জ্বল করা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকা মাদকমুক্ত করা, হলসমূহকে শিক্ষার্থীদের বসবাসের জন্য নিরাপদ করে তোলা।

তিনি বলেন,এর অংশ হিসেবে একটানা চারদিন সবগুলো হলে প্রক্টরিয়াল বডি এবং নিরাপত্তা দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে নিয়মিত পরিদর্শন পরিচালিত হয়। এই পরিদর্শন চলাকালে প্রচুর দেশীয় ধারালো অস্ত্র,মাদক ব্যবহারের সরঞ্জাম, লোহার রড, ছুরি, বিভিন্ন ধরনের বোমা ইত্যাদি জব্দ করা হয়। আমাদের নিয়মিত পরিদর্শন অব্যাহত আছে এবং থাকবে।

RA/SM
আরও পড়ুন