আজ বিশ্ব থাইরয়েড দিবস

থাইরয়েড আক্রান্ত দেশের পাঁচ কোটি মানুষ

আপডেট : ২৫ মে ২০২৫, ০৪:১১ পিএম

দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের বেশি মানুষ বিভিন্ন ধরনের থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত। সে হিসাবে দেশের পাঁচ কোটি মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু ৬০ শতাংশের বেশি মাসুষ জানে না যে, তারা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন।

এমন বাস্তবতায় শনিবার (২৫ মে) পালিত হচ্ছে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২০২৪। এবারের প্রতিপাদ্য ‘থাইরয়েড রোগ অসংক্রামক রোগ’। ২০০৯ সাল থেকে ২৫ মে সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে উদযাপিত না হলেও থাইরয়েড রোগসংশ্লিষ্ট সংগঠন থাইরয়েড টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) কয়েক বছর নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করছে। এ ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলেনে জানানো হয়, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, থাইরয়েড রোগ বিস্তারে বংশগতির প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে দাদি, নানি বা মায়েদের থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে শিশুরও এ সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটির বেশি মানুষ থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছে, যা মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের প্রায় ২ শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা) রোগে ভুগছেন। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এ সময় চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশের প্রায় ৫ কোটির বেশি মানুষ বিভিন্ন ধরনের থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু এদের সিংহভাগেরও বেশি মানুষ জানে না তারা এ সমস্যায় আক্রান্ত। থাইরয়েড গ্রন্থিটি মূলত গলার সামনের দিকের উঁচু হাড়ের নিচে অবস্থিত। গ্রন্থিটি দেখতে প্রজাপতিসদৃশ এবং এটি ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালিকে পেঁচিয়ে থাকে। যদিও এটি একটি ছোট গ্রন্থি, কিন্তু এর কার্যকারিতা ব্যাপক। থাইরয়েড গ্রন্থি কর্তৃক নিঃসৃত হরমোন মানব পরিপাক প্রক্রিয়ার অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ভ্রূণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থাইরয়েড হরমোনের প্রয়োজন অপরিহার্য। এ হরমোনের তারতম্যের জন্য শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা হওয়া, ক্ষয় হওয়া, মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা এবং চোখ ভয়ংকরভাবে বড় হয়ে যেতে পারে। বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণ হিসেবে থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যকে দায়ী করা হয়। শারীরিক কার্যক্ষমতা সঠিক রাখার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় এ হরমোন শরীরে থাকা জরুরি। হরমোন স্বাভাবিক থেকেও থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। সাধারণত আয়োডিনের অভাবে গলাফোলা রোগ হয়ে থাকে, যাকে সাধারণ ভাষায় ঘ্যাগ রোগ বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশে যদিও আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া হচ্ছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এদেশের বেশিরভাগ স্কুলগামী শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের আয়োডিনের অভাব রয়ে গেছে। এ আয়োডিন শরীরে অতিপ্রয়োজনীয় থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। থাইরয়েড হরমোনের সব ধরনের চিকিৎসা এ দেশে হয়।

গত ৩০ বছরে বিএসএমএমইউর থাইরয়েড ক্লিনিকের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ সুচিকিৎসা পেয়েছেন। ক্লিনিকটি দেশের একমাত্র সমন্বিত থাইরয়েড ক্লিনিক, যা নিউক্লিয়ার মেডিসিন এবং সার্জারি বিভাগের মাধ্যমে মানুষকে সেবা দিয়ে আসছে। এ ছাড়াও বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ দেশের প্রায় প্রতিটি মেডিকেল কলেজের হরমোন বিভাগ ও পরমাণু চিকিৎসাকেন্দ্রে থাইরয়েডের চিকিৎসা চলছে।

থাইরয়েড রোগ প্রতিরোধে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে বলেন, আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া ও রেডিয়েশন থেকে মুক্ত থাকা উচিত, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়। হাইপার, হাইপো বা থাইরয়েড প্রদাহজনিত কোনো লক্ষণ দেখা দিলে শিগগিরই রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। ঘ্যাগ বা অন্য কোনো কারণে থাইরয়েড বড় হয়ে গেলে বা ক্যান্সার হলে সার্জারির মাধ্যমে কেটে ফেলা উচিত। যাদের বংশগত থাইরয়েড সমস্যার ইতিহাস আছে, তাদের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত। কোনো শিশুর বা বয়স্কদের অবর্ধন শারীরিক ও মানসিক, ঠান্ডা বা গরম সহ্য করতে না পারা, বুক ধড়ফড় করা, খাওয়া ও রুচির সঙ্গে ওজন কমা ইত্যাদি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

AHA/FI
আরও পড়ুন