ধূমপান একবার অভ্যাসে পরিণত হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া অনেকের কাছেই অসম্ভব মনে হয়। কিন্তু সত্যি কথা হলো, কিছু নতুন অভ্যাস ও মানসিক প্রস্তুতি থাকলে ধূমপান ছাড়া সম্ভব এবং সেটা কঠিন কিছু নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ ধূমপানজনিত রোগে মারা যায়। এর মধ্যে ৭ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি ধূমপানের কারণে মারা যায় এবং ১.৩ মিলিয়ন মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে মারা যায়। সিগারেট গ্রহণ বা ধূমপান শুধু একটি খারাপ অভ্যাস নয়, এটি আপনার শরীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। চলুন জেনে নিই সিগারেট ছাড়ার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়গুলি।
মানসিক প্রস্তুতি
সিগারেটের অভ্যাস দূর করার মূল চাবিকাঠি হলো মানসিক সিদ্ধান্ত। আপনি যদি নিজেকে প্রশ্ন করেন, “আমি কেন সিগারেট ছাড়তে চাই?”—তাহলেই শুরু হবে পরিবর্তনের যাত্রা। নিজের পরিবারের কথা ভাবুন, নিজের শরীরের কথা ভাবুন—এটাই আপনার মোটিভেশন।
ধাপে ধাপে ছাড়ুন – হঠাৎ নয়
অনেকেই ভাবেন একদিনেই সিগারেট বন্ধ করতে হবে। এটা সম্ভব হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কার্যকর হয় ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি দিনে ১০টি সিগারেট খান, তা ধীরে ধীরে কমিয়ে ৫টি-তে আনুন সপ্তাহ ধরে। তারপর আরও কমিয়ে ৩ টি, ২ টি-তে আনুন। তারপর একেবারে ছেড়ে দেওয়ার অভ্যাস করুন।
বিকল্প অভ্যাস গড়ে তুলুন
ধূমপান ছাড়ার সময় হাত ও মুখ ব্যস্ত রাখতে কিছু না কিছু দরকার হয়। চুইংগাম, চকলেট, বা বাদাম খাওয়া—এই অভ্যাসগুলো সিগারেটের জায়গা নিতে পারে। এছাড়াও হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাও সাহায্য করে।
ট্রিগার এড়িয়ে চলুন
অনেক সময় চা বা কফির সঙ্গে, বন্ধুদের আড্ডায়, বা কাজের চাপে আমরা সিগারেট খেতে চাই। এসব পরিস্থিতি চিনে ও বুঝে সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করুন
বন্ধু, পরিবার, অথবা কাউন্সেলরের সহায়তা নেওয়া খুব জরুরি। তাদের জানিয়ে রাখুন আপনি সিগারেট ছাড়ছেন। তারা আপনাকে উৎসাহ দেবে এবং দুর্বল সময়ে পাশে থাকবে।
খাবারের ধরন পরিবর্তন করুন
আপনার খাদ্যাভ্যাসও ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, দুধ, ফলমূল এবং সবজি খেলে ধূমপানের স্বাদ ও আকর্ষণ কমে যায়। অন্যদিকে, ফাস্ট ফুড, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল ধূমপানের ইচ্ছা বাড়ায়।
তাই, খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে আপনি আপনার ধূমপানের অভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেন। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন, যা আপনার শরীরকে শক্তি যোগাবে এবং ধূমপানের তীব্র আকাঙ্ক্ষা কমাবে।
ব্যস্ততা বাড়ান
অলস সময় কাটালে ধূমপানের ইচ্ছা তীব্রভাবে জাগতে পারে। তাই, নিজেকে এমন কাজে ব্যস্ত রাখুন যেগুলো আপনার মনকে অন্যদিকে মোড়াবে এবং সিগারেট গ্রহণের সুযোগ আসবে না। নিয়মিত শরীরচর্চা, হাঁটাহাঁটি, বই পড়া বা এমন কোনো শখ বেছে নিন যা আপনার মনকে প্রশান্ত করবে।
বাসায় পোষা প্রাণি রাখতে পারেন, নতুন কোনো স্কিল শিখতে পারেন বা কোনো নতুন হবি শুরু করতে পারেন—এভাবে আপনি ধূমপানের চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
অধূমপায়ী বন্ধু বাড়ান
জিম রনের একটি উক্তি আছে- “You are the average of the five people you spend the most time with”. অর্থাৎ আপনি কেমন ব্যক্তিত্বের হবেন বা আপনার জীবন কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কাদের সাথে মিশেন।
সিগারেট ছাড়তে, এমন বন্ধুদের সাথে সময় কাটান যারা ধূমপান করেন না। তাদের সাথে কথা বললে আপনি অনুপ্রাণিত হবেন এবং সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাবে।
মুখ খালি রাখবেন না
ধূমপান ছাড়ার আরেকটি কার্যকরী উপায় হলো, মুখকে ব্যস্ত রাখা। সিগারেটের বদলে চুইংগাম, চকলেট, বাদাম, ফল বা এমনকি পানি পান করুন। যখনই আপনি অন্যকিছু খাবেন, ধূমপানের তীব্র আকাঙ্ক্ষা কমে যাবে। এই পরিবর্তনটা ছোট হলেও, প্রতিদিনের জীবনে এর প্রভাব বেশ ব্যাপক হতে পারে।
প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের সহায়তা নিন
অনেক সময় নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এনআরটি), যেমন নিকোটিন প্যাচ বা গাম দরকার হতে পারে। এসব বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটি পুরো প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে।
সিগারেটের অভ্যাস ছাড়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো নিজেকে বোঝানো যে আপনি পারবেন। ছোট ছোট পরিবর্তন এনে ধীরে ধীরে অভ্যাস পরিবর্তন করুন।
