ঢাকা
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ইনডোর প্লে–জোন কি শিশুর মানসিক বিকাশে বাধা!

আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ০৬:০৩ পিএম

সানজিদা আক্তার। সেদিন ছেলের জন্য তিনি একটা বই কিনেছিলেন। বাসায় গিয়ে মোড়ক খুলতেই দেখতে পেলেন স্থানীয় একটি ইনডোর গেমস হাউসের বিনা মূল্যের প্রবেশের টিকিট। ছেলে টিকিট হাতে পাওয়ার পর তো মহাখুশী। কিন্তু এসব ইনডোর গেমস সানজিদার খুব একটা পছন্দ নয়, তারপরও ছেলের আগ্রহের বিষয়টি বুঝতে পেরে একদিন নিয়ে যেতে বাধ্য হলেন।

সেখানে আরও অনেক অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলো। যাদের অনেকেই সন্তানের ইচ্ছার কাছে হার মেনে রঙিন এসব খেলনার মধ্যে খেলাতে নিয়ে এসেছেন। বেশির ভাগই মনে করেন, এসব ইনডোর অ্যাকটিভিটিতে তেমন কোনো লাভ নেই। কেবল ভালো মাঠ নেই বলে বলতে গেলে এক রকম বাধ্য হয়েই শিশুদের এখানে নিয়ে আসতে হচ্ছে।

সানজিদা বলছিলেন, ‘ইনডোর গেমসগুলোয় নিয়ে যাওয়া আমার কাছে টাকা নষ্ট বলে মনে হয়। ছোট্ট একটু জায়গায় অনেক শিশু খেলতে আসে। আমার তো আনহাইজেনিকও লাগে। তা ছাড়া পার্ক বা মাঠে শিশুর যে মানসিক ও শারীরিক বিকাশ হয়, ইনডোর গ্রাউন্ডে তা হয় না বলেই মনে করি।’

সানজিদার মতো এমন অনেকেই মনে করেন, শিশুদের খেলার জন্য খোলা মাঠ বা খোলা পার্কই উপযুক্ত। কিন্তু ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো অনেক শহরে খেলার জন্য মাঠ পাওয়া অনেকটা সোনার হরিণের মতো। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে ইনডোর গেম সেন্টারগুলোর দ্বারস্থ হন। মনে দ্বিধা থাকলেও অভিভাবক ভাবেন, একটু ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি তো হচ্ছে। আর তার জন্য কিছু টাকা নাহয় খরচ হলোই।

এখন প্রশ্ন হলো, আসলেই কী ইনডোর গেমস শিশুদের জন্য খারাপ? আমরা যদি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে তাকাই, বিশেষ করে শীতপ্রধান দেশগুলোয় শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া বা বিকাশের শুরুটাই হয় ইনডোরের বিভিন্ন অ্যাকটিভিটি দিয়ে।

অস্ট্রেলিয়ার আর্লি চাইল্ডহুড–বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ব্রিজ রোড আর্লি লার্নিং সেন্টারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ইনডোর গেমসের উপকারিতার কথাও বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইনডোর গেমসে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে জ্ঞানীয় দক্ষতার উন্নতি হতে পারে। নির্ধারিত স্থানে বিভিন্ন কাজে বা খেলায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে শিশুরা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তাদের কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটাতে পারে। তাদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ে এবং সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

পাশাপাশি ঘরের ভেতরে খেলাধুলার ফলে একটি নিরাপদ স্থানে বসে বন্ধু বা সঙ্গীদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পায় শিশু। এ ক্ষেত্রে সাধারণত সহযোগিতামূলক ও দলগত খেলা বেশি হয়, যা তার যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ায়।

সেখানে অবশ্য আউটডোর খেলা বা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিষয়েও বিস্তর বলা হয়েছে। বাইরে খেলাধুলা করলে শিশু বাতাস, বৃষ্টিসহ প্রকৃতির সংস্পর্শে আসে, যা তার বেড়ে ওঠার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।

আমাদের দেশে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো কয়েকটি বড় শহর ছাড়া অন্যান্য স্থানের শিশুরা আলো–বাতাস গায়ে মেখেই বড় হয়। এখনো গ্রামের শিশুদের দিনের বড় অংশ কাটে বাড়ির বাইরে খেলাধুলা করে। আর যেহেতু শহরের শিশুরা এই সুযোগ পায় না, তাই তাদের খেলার জন্য অভিভাবকদের দ্বারস্থ হতে হয় ইনডোর প্লে জোনগুলোর। যেখানে মূলত অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু অ্যাকটিভিটির সুযোগ মেলে।

কনসার্নড উইমেন ফর ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্টের (সিডব্লিউএফডি) নিবেদিতা হেলথ সেন্টারের মনোবিদ আয়েশা আক্তারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এসব ইনডোর অ্যাকটিভিটি শিশুর মনোবিকাশে কেমন ভূমিকা রাখে?

আয়েশা বলেন, এসব ইনডোর অ্যাকটিভিটি শিশুর শেখার আগ্রহ ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে। তবে খোলা পরিবেশের খেলায় শিশুদের শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। যেমন তার শক্তি বৃদ্ধি পায়, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে, সে কোনো মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে, তা–ও কমে যায়।

Raj/AHA
আরও পড়ুন