জানেন কি, যেকোনো অসুখের ওষুধ হিসেবেই হাসির গুরুত্ব অপরিসীম। সত্যিই তাই, শারীরিক কিংবা মানসিক অসুস্থতায় নির্মল হাসি কাজ করে ওষুধের মতোই। হাসির নিজস্ব সুবিধা কিছু রয়েছে। হাসলে মেজাজ ঠান্ডা থাকে, মনে উচ্ছ্বাস থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এমনকি দীর্ঘ আয়ু পেতে এবং একে অপরের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরিতেও হাসিই একমাত্র স্বাভাবিক উপায়।
জাপানের ইয়ামাগাটা ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ৪০ বছর বা তার কম বয়সী ১৭,১৫২ জন লোকের উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন। সেখানে তাদের হাসির ধরণগুলো ট্র্যাক করেছেন গবেষকরা।
গবেষণায় বলা হয়েছে, আমরা যখন বেশি হাসি, তখন আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় এবং দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে এই গবেষণাটি জাপান সরকারকে একটি আইন পাস করার জন্য চাপ দিয়েছে যাতে নাগরিকদের প্রতিদিন হাসতে হয়।
এ ছাড়াও হাসির উপকারিতা সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে অন্বেষণ এবং অধ্যয়ন করা হয়েছে। প্রিভেন্টিভ মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বয়স্ক ও প্রাপ্তবয়স্করা যখন তাদের বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে বেশি হাসে, তখন তাদের বয়সের লোকেরা সাধারণত যে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে তারা সেসব ঝুঁকি কমাতে পারে।

হাসি উদ্বেগ কমায়:
নার্সিং অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেসের আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, আমরা যখন নাটকীয়ভাবে হাসি, তখন তা শরীরে কর্টিসল-স্ট্রেস হরমোন মাত্রা কমাতে পারে এবং উদ্বেগ কমাতে পারে। হাসি শরীরের স্বাভাবিক শিথিলকরণ প্রক্রিয়া সক্রিয় করতে সাহায্য করে এবং আমাদের স্বস্তিবোধ তৈরি করে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক রবিন ডানবার বছরের পর বছর ধরে হাসির শারীরবৃত্তীয় এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, হাসি মেজাজ স্বাভাবিক রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমরা যখন অনেক বেশি হাসি তখন পাঁজরের এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়, যা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, আমাদের আনন্দিত বোধ হয় এবং হৃদপিণ্ডের ইতিবাচক উন্নতি ঘটায়।
হাসির সামাজিক সুবিধা
যদিও হাসি স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অবদান রাখে, তবে সামাজিক আচরণেও এর উপকারিতা অপরিসীম। ইনস্টিটিউট ফর কগনিটিভ নিউরোসায়েন্সের ডিরেক্টর বলেছেন, আমাদের একা একা না হেসে অন্য কারো সাথে যুক্ত হয়ে হাসা উচিত। এটি বন্ধন তৈরি করতে এবং একে অন্যের সাথে একাত্মবোধে সহায়তা করে। হাসি আমাদের সম্পর্কের মান উন্নত করে, এটি আমাদের হৃদয়কে তরুণ এবং আনন্দিত করে তোলে।
কাজেই জীবনে যাই ঘটুক, যে অবস্থাতেই থাকুন ব্যক্তিগত লড়াইটাকে সহজ করে নিতে প্রাণ খুলে হাসতে শিখুন।
