ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ভেপিং কি সত্যিই নিরাপদ? জানুন এর ক্ষতিকর প্রভাব

গবেষণা বলছে, ই-সিগারেটেও নিকোটিনসহ নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে।

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ধূমপানের বিকল্প হিসাবে ই-সিগারেট বা ভেপিংয়ের প্রচলন বেড়েছে। ‘ই-সিগারেট প্রচলিত সিগারেটের বিকল্প, ধূমপান ত্যাগে কার্যকর। সবচেয়ে বিভ্রান্তির কথা হলো, ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর।’ যারা ভেপিং নিরাপদ মনে করতেন, তাদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

এটি মূলত একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা তরল নিকোটিন গরম করে ধোঁয়া তৈরি করে এবং ব্যবহারকারীরা সেই ধোঁয়া গ্রহণ করেন। এতে উৎপন্ন ধোঁয়া নিশ্বাসের মধ্য দিয়ে শরীরে ঢুকে সরাসরি ফুসফুস, রক্তপ্রবাহ ও শরীরের অন্যান্য কোষও আক্রমণ করে। অনেকেই মনে করেন, ভেপিং ধূমপানের তুলনায় নিরাপদ, তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।

ভেপিং কি সত্যিই নিরাপদ?

ধারণা করা হয়, ভেপিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন। কিন্তু গবেষণা বলছে, ই-সিগারেটেও নিকোটিনসহ নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে অন্তত একজন ভেপিংয়ের অভ্যাসে আসক্ত। তাদের মধ্যে অনেকেই কখনো ধূমপান করেননি, তবু তারা এ আসক্তির শিকার হচ্ছেন।

হৃদরোগ থেকে ডিমেনশিয়া: ভেপিংয়ের অন্যতম বড় সমস্যা হলো, এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষকরা জানিয়েছেন, ই-সিগারেটের নিকোটিন হার্টরেট এবং রক্তচাপ বাড়ায়, যা ধমনি সংকুচিত করতে পারে এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে।

এছাড়া, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমেও ভেপিংয়ের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ডিমেনশিয়া, স্মৃতিভ্রংশ এবং মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে, এটি কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি করতে পারে এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য জটিল সমস্যার জন্ম দিতে পারে।

নিয়ন্ত্রণহীন আসক্তি: ধূমপায়ীরা একটি সিগারেট শেষ করার পর অপেক্ষা করেন পরবর্তী ধূমপানের জন্য। কিন্তু ভেপিংয়ের ক্ষেত্রে এমন বাধা নেই। একজন ব্যবহারকারী নির্বিচারে যে কোনো জায়গায় এটি গ্রহণ করতে পারেন, যা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণহীন আসক্তিতে রূপ নেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার শরীরে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

কিশোর ও তরুণদের জন্য ভয়াবহ হুমকি: ভেপিংয়ের অন্যতম বিপজ্জনক দিক হলো, এটি তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করছে। বাজারে বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত ই-সিগারেট পাওয়া যায়, যা তরুণদের কাছে অত্যন্ত লোভনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অল্প বয়সে ভেপিং শুরু করলে ফুসফুসের রোগ, দাঁতের সমস্যা এবং ক্যানসারের মতো রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দশকে ভেপিংয়ের কারণে তরুণদের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

ভেপিংয়ের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান: ভেপিংয়ের তরলে থাকে প্রোপিলিন গ্লাইকল, গ্লিসারিন, ফ্লেভারিং এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ। এগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

গবেষণার চাঞ্চল্যকর তথ্য
হৃদরোগ পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞ ড. ম্যাক্সিম বোইডিনের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভেপিংয়ের ফলে ধমনি সংকুচিত হয়ে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের স্ট্রেস টেস্টের মাধ্যমে দেখা যায়, যারা ভেপ ব্যবহার করেন এবং যারা ধূমপান করেন, উভয়ের ধমনি প্রায় একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ধূমপান বনাম ভেপিং

অনেকে মনে করেন, ধূমপানের তুলনায় ভেপিং কম ক্ষতিকর। তবে গবেষণা বলছে, এটি শুধু একটি বিভ্রান্তি। যদিও যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস’ (এনএইচএস) ভেপিংকে ধূমপানের তুলনায় নিরাপদ বলে উল্লেখ করেছে, তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ভেপিং ধূমপানের বিকল্প হতে পারে না, বরং এটি আরও বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। তরুণ সমাজকে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি।

AHA
আরও পড়ুন