বর্ষাকালে সুস্থ থাকতে হলে কিছু সাধারণ সতর্কতা ও নিয়ম মেনে চলতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, সঠিক খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত জল পান করা, মশার উপদ্রব থেকে নিজেকে বাঁচানো এবং ভেজা জামাকাপড় এড়ানো – এগুলো বর্ষায় সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বর্ষার সময় কয়েকটি খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। বর্ষার সময় চাই পুষ্টিকর খাবার। বিশেষ করে যেসব খাবারে অ্যান্টিবডি থাকে। কেননা, বর্ষায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়।
এক নজরে দেখে নিন বর্ষায় সুস্থ থাকার উপায়:
* বর্ষার সময় যত দূর সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। বর্ষায় কৃত্রিম আক্রমণও বেশি হয়। তাই এখন এড়িয়ে চলুন কাঁচা সবজি, শসা, পেঁয়াজ, টমেটো। এর থেকে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, আমাশা, বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* বর্ষাকালে প্রতিদিন মৌসুমি ফল খান। আপেল, আনারস, বেদানা, পেয়ারা খেতে পারেন। মৌসুম শেষের আমও খাওয়া যেতে পারে, তবে পরিমিত পরিমাণে। তা না হলে ওজন বৃদ্ধি, ব্রণ ও ফুসকুড়ির সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন সি যুক্ত ফল ও সবজি খান, এতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
* অসময়ের ফুলকপি, বরবটি, রাজমা, ছোলার ডাল বর্ষায় কম খান। কাঁচা সবজির সালাদের বদলে অল্প জলে ভাপিয়ে নিয়ে সবজি খান। এতে ব্যাকটেরিয়াল ও ভাইরাল ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। রান্নায় শাকসবজি ব্যবহার করার আগে কম করে আধঘণ্টা লবণলে ভিজিয়ে রেখে তারপর রান্না করুন।
* বর্ষায় মাশরুম খাওয়া উচিত নয়। বর্ষাকালে মাটিতে ওঠা মাশরুমে থাকে সংক্রমণের আশঙ্কা।
* বর্ষায় ডেয়ারি পণ্য খাওয়া উচিত নয়। দইয়ে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে পেটে গণ্ডগোল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
* বর্ষায় মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজননের সময়। বর্ষায় মাছ খেলে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্ষায় আবর্জনা জমে থাকে আঁশে। তাই মাছ খাওয়া উচিত নয়।
* বর্ষায় হজম ক্ষমতা দুর্বল থাকে। তাই খাবার হজম করতে সমস্যা হয়। সেজন্য রেড মিট খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
* বর্ষায় প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি করে খাওয়া প্রয়োজন। ডিম, ডাল, সয়াবিন, বাদামের মতো ভরপুর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া প্রয়োজন। এতে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
* কাজু, কিশমিশ, পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম, খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। এসব খাবার রোগের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে।
* বর্ষাকালে হলুদ-দুধের মতো উপকারী জিনিস খুব কমই আছে। হলুদে রয়েছে কারকিউমিন নামক একটি উপাদান। ব্যাক্টেরিয়াজাত সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে হলুদ-দুধ রাখতেই পারেন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়।
* সুস্থ থাকতে কাঁচা লবণ, অতিরিক্ত নোনতা খাবার- যেমন, বাদাম, চিপস, ডালমুট এড়িয়ে চলুন। এতে শরীরে ওয়াটার রিটেনশন থেকে ব্লোটিংয়ের মতো সমস্যা কম হবে। ফাইবার যুক্ত ওটস, বার্লি, ব্রাউন রাইস রাখুন রোজকার ডায়েটে। তাতে পেটের সমস্যা কম দেখা দেবে। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অল্প রসুন ব্যবহার করুন রান্নায়। চায়ে অল্প আদা দিয়ে খান। পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য টক দই, ইয়োগার্ট নিয়মিত খান। প্রতিদিনের খাবার শেষে করলা সেদ্ধ, নিমপাতা, মেথি খান।
* সারা বছর যাদের স্কিনে ব্রণ, র্যাশের সমস্যা থাকে, তারা বর্ষায় তেল-মশলা যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। মাছ ও মাংস খেলে হালকা মশলায় রেঁধে খান। হার্বাল টি, লিকার চায়ে অল্প মধু, গোলমরিচ, পুদিনা বা তুলসীপাতা দিয়ে খান।
* এছাড়া বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। এ সময় ডেঙ্গু যেন না ছড়ায় সে জন্য বাসার আশপাশে যেসব জলাধার বা পানি জমে এমন পাত্র সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরের দেয়ালে যেন পানি পড়ে ফাঙ্গাস না জন্মায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘর যাতে স্যাঁতসেঁতে হয়ে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এ থেকে রোগবালাই হয় বেশি। বর্ষায় পোকামাকড়, সাপ ও জোঁকের উৎপাত বেশি হয়, সে কারণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
