ক্লান্তি কমবেশি আমাদের সবার ভেতরেই থাকে। দৈনন্দিন সারাদিনের কাজ, ছোটাছুটি, চাপ ইত্যাদি কারণে শরীরে দেখা দেয় অবসাদ-ক্লান্তি। তবে এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে খাবার। আমাদের শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে খাবার। আর শরীরের সর্বাধিক শক্তি নিশ্চিত করাই হচ্ছে ক্লান্তি দূর করার সর্বোত্তম উপায়।
শরীর নামক এই যন্ত্রটিকে ঠিকঠাক চালানোর জন্য জ্বালানি হিসাবে আমরা খাবার খাই। আর কাজের মাধ্যমে সেই এনার্জি আমরা খরচ করে ফেলি। যখন শরীরের এই শক্তির ভাণ্ডার ফুরিয়ে আসে তখনই ক্লান্তি গ্রাস করে। এর ওপর পরিবেশ, মানসিক অবস্থা, অসুস্থতা থেকেও ক্লান্তি আসতে পারে। ক্লান্তি কমাতে পুষ্টিবিদরা কিছু খাবারের কথা বলেন যা দ্রুত এনার্জি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
আসুন জেনে নিই এমন কিছু খাবার সম্পর্কে যেগুলো আপনার শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বজায় রাখবে এবং আপনার শরীরে শক্তি সরবরাহ করে ক্লান্তি দূর করবে।

পানি
শরীরের কার্যকারিতা সচল রাখতে এবং ভালোভাবে পরিচালিত হতে পানি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার শরীরে সরাসরি শক্তিবৃদ্ধি না করলেও শক্তির প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে সহায়তা করে।

ডিম
ডিমের মতো পুষ্টিকর খাবার আর একটাও খুঁজে দেখাতে পারবেন না। এই খাবারে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন এ। এই সমস্ত উপাদানগুলি একত্রে মিলে ক্লান্তি দূর করে। ডিমের কুসুম খাওয়ার বিষয়ে ডাক্তারের কড়া নিষেধ না থাকলে কুসুমকে অবজ্ঞা করবেন না। কুসুমে থাকা ফ্যাট চটজলদি শরীরে এনার্জি পুরে দেয়। পাশাপাশি এই ফ্যাট বিভিন্ন ভিটামিনকে শরীরে শোষণে সাহায্য করে। তাই ক্লান্ত লাগলেই ডিম খান।
কলা
সব ফলেরই কিছু না কিছু গুণ রয়েছে। তবে কলা খেলে দ্রুত ক্লান্তি দূর হয়। মেডিক্যাল নিউজ টুডে জানাচ্ছে, কলায় রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম ও কার্বোহাইড্রেট। এই সমস্ত উপাদানগুলি একত্রে মিলে শরীরকে শক্তি প্রদান করে। ফলে দ্রুত কেটে যায় ক্লান্তি। গবেষণায় দেখা গেছে, কলা খাওয়ার পর চটজলদি শরীরে এনার্জি পাওয়া যায়।

তরমুজ
ক্লান্তি দূর করতে গরমের দিনে আপনার সঙ্গী হতে পারে তরমুজ। এই ফলে রয়েছে অনেকটা পরিমাণে পানি যা তীব্র তাপদাহে ডিহাইড্রেশন বা শরীরে পানির ঘাটতি দূর করে। এছাড়া এতে আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও নানা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। তাই ঝটপট শরীরের ক্লান্তি কাটাতে তরমুজ খান। এই ফল খেলেই অনায়াসে তরতাজা থাকতে পারবেন।

কাঠবাদাম
কাঠবাদাম হল এক ধরনের বাদাম। চিনা বাদামের তুলনায় এর দাম কিছুটা বেশি। তবে এর পুষ্টিগুণ অন্যদের থেকে অনেক বেশি। এতে রয়েছে ফ্যাট, ফাইবার ও প্রোটিন। এতে থাকা ফ্যাট ও প্রোটিন পেট ভর্তি রাখে এবং এনার্জি প্রদান করে। এছাড়া এতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন। এই দুই উপাদানও কিন্তু দেহের নানা উপকার করে। স্ন্যাকস হিসাবে এই বাদাম খেলে শক্তির ঘাটতি দূর হবে। পাঁচ-ছয়টি বাদাম সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলেও অনেক উপকার পাবেন।

চা-কফি
পানীয়তে পরিমিত পরিমাণে ক্যাফেইন থাকলে সেটি আপনার শরীরে কিছুটা শক্তি সরবরাহ করতে পারে। তাই ক্লান্ত লাগলে আমরা অনেকসময় চা-কফি বা কোমল পানীয় পান করি। এগুলো সাময়িকভাবে শক্তি সরবরাহ করলেও একটু পরই ক্লান্তিভাব ফিরে আসে। এ সমস্যা এড়াতে ক্যাফেইনমুক্ত পানীয় বেছে নিন। আর চা বা কফি পান করতে হলে তা চিনি ছাড়া পান করুন।

পালং শাক
আমরা সাধারণত ভাতের সঙ্গেই পালং শাক খাই। কিন্তু এটি স্যুপ বা সালাদ হিসাবে নানাভাবে যে কোনও সময়ে খাওয়া যায়। এই শাকে রয়েছে ভিটামিন কে, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রনের ভাণ্ডার। এই উপাদানগুলি ক্লান্তি দূর করে শরীরকে সচল রাখতে সাহায্য করে। এই শাক খেলে ক্লান্তি দূর হয়।

চর্বিহীন প্রোটিন খাবার
রেড় মিট বা লাল মাংসগুলো প্রোটিনের ভালো উৎস হলেও এগুলোতে থাকা ফ্যাট আপনার ক্ষতি করতে পারে। তাই চর্বিহীন প্রোটিন খাবার যেমন- মুরগি/টার্কির মাংস, মাছ ও পাতলা মাংস খেতে পারেন। এগুলো আপনার শরীরে শক্তি জোগাতে ও ক্লান্তিভাব দূর করতে সহায়তা করবে।
ফল ও সবজি
আপনার খাবার যত বেশি তাজা ও টাটকা হবে, এতে পুষ্টির পরিমাণও তত বেশি থাকবে। আর তাজা ফল ও সবজি আপনার শরীরে শক্তি ভালোভাবে সরবরাহ করে দূর করতে সহায়তা করে আপনার ক্লান্তিভাব।
