বর্তমানে নানা ধরনের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে কিটোজেনিক বা কিটো ডায়েট বেশ জনপ্রিয়। এই ডায়েটে শরীর শর্করার বদলে চর্বি থেকে শক্তি গ্রহণ করে, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মো. ইকবাল হোসেন জানান, কিটো ডায়েট দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক হলেও তা স্থায়ী নয়। স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে ফিরলেই ওজন ও পূর্বের সমস্যাগুলো ফিরে আসে।
কিটো ডায়েট কী
কিটো ডায়েটে খুব কম শর্করা, পর্যাপ্ত প্রোটিন ও বেশি স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করা হয়। এতে শরীর গ্লুকোজের বদলে চর্বি ভেঙে শক্তি নেয়, যাকে বলে ‘কেটোসিস’। এই অবস্থায় লিভার চর্বি থেকে ‘কিটোন’ তৈরি করে, যা শরীর ও মস্তিষ্কে শক্তি জোগায়।
কিটো ডায়েটের উপকারিতা
ওজন কমায়
কিটো ডায়েটের বড় সুবিধা হলো দ্রুত ওজন কমানো। কার্বোহাইড্রেট কম থাকায় শরীর পানি ধরে রাখতে পারে না, ফলে ওজন কমে। এটি হজমপ্রক্রিয়া বাড়িয়ে ক্ষুধা কমায়। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিটো অনুসরণকারীরা বছরে গড়ে ২ পাউন্ড বেশি ওজন কমিয়েছেন।
ত্বকের উন্নতি করে
বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কিটো ডায়েট ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। কারণ, এটি রক্তে শর্করার ওঠানামা কমায় এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে, যা ত্বকের সমস্যা কমাতে সহায়ক।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
কিছু গবেষণার ফলাফল জানাচ্ছে, কিটো ডায়েট ক্যানসার কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়িয়ে তাদের ধ্বংস করতে পারে। একই সঙ্গে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে ইনসুলিনের স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এ প্রক্রিয়া কোনো কোনো ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। তবে এই ক্ষেত্রে আরও বড় পরিসরের গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
হার্টের স্বাস্থ্য
কিটো ডায়েটে অ্যাভোকাডো, বাদাম বা অলিভ অয়েলের মতো আরও চর্বি খাওয়া হয়। সেগুলো ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল কমিয়ে ‘ভালো’ কোলেস্টেরল বাড়ায়। এর ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে। তবে এখানে খেয়াল রাখতে হবে, ফাস্টফুড বা প্রক্রিয়াজাত মাংসজাতীয় চর্বি বেশি খেলে বিপরীত প্রভাব পড়তে পারে।

মস্তিষ্কের সুরক্ষা
কিটো ডায়েট থেকে তৈরি কিটোন মস্তিষ্কের নিউরন রক্ষায় সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আলঝেইমার ও পারকিনসনের মতো নিউরোলজিক্যাল রোগে এটি উপকারী হতে পারে।
মৃগীরোগে উপকার
যেসব মৃগীরোগীর ওষুধে খুব একটা কাজ হয় না, তাদের মধ্যে কিটো ডায়েট সংক্রমণ কমাতে সহায়ক বলে প্রমাণিত। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি অনেক সময় সফল হয়।
হরমোনজনিত সমস্যা
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো হরমোনজনিত সমস্যায় কিটো ডায়েটের কারণে উপকার পাওয়া যায়। এটি ওজন কমায়, হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিটো ডায়েটের উপকার যেমন আছে, তেমনি ঝুঁকিও রয়েছে। দীর্ঘদিন এ ডায়েট অনুসরণ করলে চুল পড়া, ত্বকের সমস্যা, ফ্যাটি লিভার, কিডনিতে পাথর ও স্ট্রোকের মতো জটিলতা হতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীদের কিটো অ্যাসিডিটির ঝুঁকিও থাকে। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ কিটো ডায়েট কিছুদিন স্বাভাবিক ডায়েট করাই নিরাপদ।
পুষ্টিবিদ মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে শুধু ওজন কমানোর জন্য কিটো ডায়েট প্র্যাকটিস করা হয়। ওজন কমানোর জন্য ব্যালান্স ডায়েটই সর্বোত্তম। এ ক্ষেত্রে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে না। কমানো ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও খুবই কম। তাই কোনো শর্টকাট উপায়ে ওজন না কমিয়ে বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন কমানো উচিত।’
কিটো ডায়েট ওজন কমানো ও কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হতে পারে, তবে এটি সবার জন্য নয়। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য নেই। ডায়েট শুরু করার আগে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সুষম খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়ামই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ডি-ফ্যাবের আহ্বায়ক আসাদ, সদস্যসচিব নাজমুল
হাঁসের মাংস খাওয়ার আগে ৫ সতর্কতা
কমছে মাতৃদুগ্ধ পান, বাড়ছে নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি