ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ভালোবাসা প্রতিদিনের প্রতি মুহূর্তের

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৬ এএম

রাজীব বিশ্বাস: 'আমার পরানে যে গান বাজিছে/তাহার তালটি শিখো-তোমার চরণমঞ্জীরে/ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে/আমার মুখর পাখি-তোমার প্রাসাদপ্রাঙ্গণে'- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বলাই যায় এক চিলতে ভালোবাসার জন্য মানুষ কল্পনার রাজ্যে অবাধ বিচরণ করতে পারে।

ভালোবাসা মনের একটি অনুভূতি। এ অনুভূতিটা কেউ দেখতে পায় না, অনুভব করে বুঝে নিতে হয়। অনেকেই বলেন ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। প্রেম হতে পারে প্রেমিকার সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে, কিংবা স্রষ্টার সঙ্গে। অনেকে বলেন ভালোবাসা মানেই বাবা-মা। পরে সন্তান। বাবা মায়ের জন্যই এ পৃথিবী দেখা। ভালোবাসা হবে নিখুঁত। যেখানে থাকবে সম্মানবোধ। থাকবে না কোনো প্রতারণা। 

আবার ভালোবাসা মানে দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভব করা। ভালোবাসা মানে কমিটমেন্ট। একজনের কাছে আরেকজনের দায়বদ্ধতা। কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না। মরে যাওয়া ভিন্ন কথা। কিন্তু সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকার নাম ভালোবাসা। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার নামই ভালোবাসা। কখনও প্রিয় মানুষটির প্রতি অশুভ আচরণ না করা। ক্ষতি না চাওয়া। 

ভালোবাসা অক্সিজেনের মতো। অক্সিজেন ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনই বেঁচে থাকলেও ভালোবাসা ছাড়া মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে না। তাই বেঁচে থাকার জন্য মানুষের ভালোবাসা খুব দরকার হয়। 

ভালোবাসা দিবস নিয়ে ইতিহাসে যা বলে : ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে। সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। যদিও এ দিনে বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান, বন্ধু-বান্ধব সবার প্রতিই ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়। তবে এর ভিন্নমাত্রা দেখা যায় প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে। এ দিনে তারা একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন ভিন্ন মাত্রায়।

ইতিহাস থেকে যে কয়টি কারণ জানা গেছে, এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ঘিরে কয়েকটি ঘটনা।

ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালপি। তিনি ছিলেন খিস্ট্রধর্মের অনুসারী। তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন দেব-দেবী পূজারী। সম্রাট তাকে দেব-দেবী পূজা করতে বললে তিনি তা অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে সম্রাট ভ্যালেন্টাইনকে বন্দি করেন। পরবর্তীতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ থেকেই প্রেমিক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ঘিরে আরেকটি মত পাওয়া যায়। তরুণ-তরুণীদের অনেকেই ফুল উপহার নিয়ে কারারুদ্ধ সেন্ট ভ্যালেন্টানইকে দেখতে আসতেন। কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে আসতেন। একসময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যান। তার আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় দৃষ্টি ফিরে পায় মেয়েটি। যুবক-যুবতীদের প্রতি তার ভালোবাসা আর ভ্যালেন্টাইনের প্রতি তাদের ভালোবাসার কথা জানতে পেরে সম্রাট ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ঘিরে আরো একটি মত পাওয়া যায়। রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসকে তার সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে দরকার হয় বিশাল সেনাবাহিনীর। এজন্য সেনাবাহিনীতে যুবকদের যোগদানে বাধ্য করতে বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সম্রাট। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যান। 

ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনও এ নিষেধাজ্ঞা মেনে নিতে পারেননি। তিনি গোপনে তার গির্জায় বিয়ে পড়ানোর কাজও করতে থাকেন। তিনি পরিচিতি পেলেন ‘ভালোবাসার বন্ধু বা ‘Friend of Lovers’ নামে। কিন্তু এ বিষয়টি সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন।

১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের হাত ধরে ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব ঘটে। লন্ডনে পড়াশোনার সুবাদে পাশ্চাত্যের রীতিনীতিতে তিনি ছিলেন অভ্যস্ত। দেশে ফিরে তিনিই ভালোবাসা দিবসের শুরু করেন। তার চিন্তাটি নতুন প্রজন্মকে বেশি আকর্ষণ করে। সে থেকেই বাংলাদেশে দিনটির শুরু।

ভালোবাসা একদিনের জন্য নয়। ভালোবাসা চিরন্তন। ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা জয় করতে হয়। তবে এ ভালোবাসা শুধু ভালোবাসা দিবসের জন্য নয়। এ দিন উপলক্ষেও নয়। ভালোবাসা প্রতিদিনের প্রতি মুহূর্তের।

আরও পড়ুন