বুধবার (২৯ মে) তৃতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে ৮৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ২০ শতাংশের কম জনসমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন অন্তত ৪৭ জন। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশের কম জনসমর্থন পেয়ে ৭ জন জয়ী হয়েছেন।
এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে দ্বিতীয় ধাপের ১৫৬টি উপজেলার মধ্যে ৮৯টিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তাদের নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ২০ শতাংশের কম ভোট পেয়ে। অবশ্য প্রদত্ত ভোটের হিসাবে তাদের ভোটের হার আরও বেশি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে পাওয়া ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সব উপজেলার ফলাফল সমন্বয় করে। তাতে দেখা যায়, তৃতীয় ধাপে ভোট পড়ার হার ৩৬.২৪ শতাংশ। এর আগে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৩৭.৫৭ শতাংশ। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৩৬.১ শতাংশ। এই ভোটের হার গত দেড় দশকের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে সর্বনিম্ন।
১০ শতাংশের কম ভোটেও চেয়ারম্যান
এবারের উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে যারা ১০ শতাংশের কম সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের একজন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের মো. মোস্তফা মহসিন। ইসি সূত্র জানায়, এই উপজেলায় মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৭৯ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৫৫৭ জন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা মহসিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ২৭ হাজার ১১৯ ভোট পেয়ে। অর্থাৎ তিনি তার নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের মাত্র ৬.৮০ শতাংশের ভোট পেয়েছেন।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের উপজেলা নির্বাচনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮০ হাজার ১১১। এর মধ্যে ৩৬ হাজার ৬৭৭ জনের ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন শাহেদ শাহরিয়ার। তিনি পেয়েছেন তার নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ৭.৬৩ শতাংশের ভোট।
অতি অল্প ভোট পেয়ে যদি চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পান, তাতে হয়তো আইনগত বাধা নেই। কিন্তু নৈতিকভাবে তাদের কতটা বৈধতা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
সাতক্ষীরা সদরে ভোট পড়েছে ২৩.০৭ শতাংশ। এখানে ৩১ হাজার ১৯৬ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মশিউর রহমান। তার উপজেলায় মোট ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৬ হাজার ১৬৩ জন। সে হিসাবে তিনি পেয়েছেন মোট ভোটারের ৭.৬৮ শতাংশের ভোট।
এ ছাড়া বগুড়া সদরের শুভাশিস পোদ্দার, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, সিলেটের বিয়ানীবাজারের আবুল কাশেম ও টাঙ্গাইল সদরের তোফাজ্জল হোসেন ১০ শতাংশের কম জনসমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
ফেনীর তিন উপজেলার হার নিয়ে প্রশ্ন
তৃতীয় ধাপে ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলায় নির্বাচন হয়। এই তিন উপজেলাতেই ভোট বেশি পড়েছে। ফেনীর তিন উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা বিপুল ব্যবধানে জিতেছেন। তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে শুধু এই তিন উপজেলায় নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ৩৫ শতাংশের বেশি জনসমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন।
ফেনী সদর উপজেলায় ভোট পড়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৩৪৩টি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মঞ্জুর আলম পেয়েছেন ৭ হাজার ৩০৯ ভোট।
দাগনভূঞা উপজেলায় জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবির ১ লাখ ১৭ হাজার ভোট এবং সোনাগাজীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মাহমুদ ৮৬ হাজার ১৭১ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
তৃতীয় ধাপে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায়, ৫৮.৮৩ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায়, ১৩.৬৪ শতাংশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকারব্যবস্থার নির্বাচন—সব ধরনের ভোটেই মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এর প্রতিফলন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলায়ও দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের অনাস্থাকেই কম ভোটের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকেরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অতি অল্প ভোট পেয়ে যদি চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পান, তাতে হয়তো আইনগত বাধা নেই। কিন্তু নৈতিকভাবে তাদের কতটা বৈধতা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নির্বাচনের প্রতি মানুষের অনাস্থার প্রতিফলন এই ভোটের ফলাফল।
