চট্টগ্রামে গত রাতও ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য হতাশার । বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়াম ভরপুর ছিল প্রত্যাশায়-হয়তো তরুণরা প্রমাণ করবেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই নিরাপদ। কিন্তু রাতের শেষে আলো নিভে গেল সেই আশারই। ১৪ রানের হারে সিরিজ নিশ্চিত করে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আর বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা আবারও তুলে ধরল এক পুরনো সত্য-অভিজ্ঞতা হারালে স্থিরতাও হারিয়ে যায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শুরুটা ছিল ভয়ঙ্কর। শাই হোপ ও আলিক আথানাজ এমনভাবে খেলছিলেন, মনে হচ্ছিল ২০০ ছোঁয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের কৌশলময় বোলিংয়ে থেমে গেল তাদের দৌড়। ৯ উইকেটে ১৪৯ রানে থামল ইনিংস, যা বাংলাদেশের জন্য বেশ গ্রহণযোগ্য লক্ষ্যই ছিল।
জবাবে বাংলাদেশ শুরুটা ভালোই করে। লিটন দাস কিছুটা মেজাজে, তানজিদ হাসান তামিম দারুণ ছন্দে। তানজিদের ৪৮ বলে ৬১ রানের ইনিংস যেন আশার আলো জ্বেলে দিয়েছিল। হাতে ছিল সাত উইকেট, দরকার মাত্র ৩ ওভারে ৩৩ রান-এমন অবস্থায় ম্যাচ হারাটা শুধুই আত্মহত্যার শামিল। কিন্তু সেটাই ঘটল।
মিডল অর্ডারে এল সেই পুরনো দৃশ্য-উইকেট হারানোর আতঙ্ক, দায়িত্বজ্ঞানহীন শট, আর ব্যাটিংয়ের বিশৃঙ্খলা। জাকের আলী অনিক কিংবা শামীম হোসেন-কেউই চাপে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেননি। সুযোগ ছিল, কিন্তু মনোযোগ হারিয়ে সবকিছু ভেসে গেল ক্যারিবীয় বোলারদের হাতে।
ম্যাচ শেষে অনেকের মনে এক প্রশ্ন-এই দলে নেতৃত্ব কে দেবে, যখন ম্যাচের মোড়ে কেউ সামনে আসে না? সামাজিক মাধ্যমে রুবেল হোসেনও লিখেছেন সেই আক্ষেপের কথা, ‘একজন মুশফিক, একজন মাহমুদউল্লাহ-আজ তাদের অভাব খুবই অনুভব করেছি। বিশেষ করে মিডল অর্ডারে।’ রুবেলের পোস্টে যেন প্রতিধ্বনি তুলেছে সবার মনের কথাই।
চট্টগ্রামের উইকেট সব সময়ই ব্যাটারদের পক্ষে থাকে। উইন্ডিজ ফিল্ডাররা জীবনও দিয়েছেন একাধিকবার-সাইফ হাসান, লিটন দাস, তানজিদ তামিম, তাওহীদ হৃদয় সবাই অন্তত একবার বেঁচেছেন। কিন্তু সুযোগ পেয়েও কেউ সেই জীবনকে ইনিংসে পরিণত করতে পারেননি। ৫, ২৩, ১২-এমন ছোট ছোট স্কোরে ভর করে বাংলাদেশ আবারও হেরেছে মানসিক দৃঢ়তায়।
শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টানা চার সিরিজ জয় ছিল বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এসে সেই আত্মবিশ্বাস যেন গলে গেল গরম বালুর মতো। এই হারে শুধু একটি সিরিজ নয়, প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুরো পরিকল্পনাই-তরুণদের হাতে তুলে দেওয়া দায়িত্ব কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে?
আগামীকাল শুক্রবার একই ভেন্যুতে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি। লিটন দাসের দল নামবে শুধু একটাই লক্ষ্য নিয়ে-ধবলধোলাই এড়ানো।
