২২ বছরের আক্ষেপ ঘোচানোর দিন, ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। ২০০৩-এর সেই ঐতিহাসিক জয়কে স্মরণ করিয়ে বাংলাদেশ আবারও ভারতকে হারাল আন্তর্জাতিক মঞ্চে। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের শেষ হোম ম্যাচে মোরসালিনের অকালপ্রস্ফুট গোলেই লাল-সবুজরা পেল কাঙ্ক্ষিত ১-০ ব্যবধানের জয়। হামজা-মোরসালিনদের লড়াই, দর্শকদের গর্জন, সব মিলিয়ে এটি হয়ে রইল বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় রাত।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ফিরতি লেগে বাংলাদেশ ১–০ গোলে ভারতের মতো প্রতিপক্ষকে হারিয়ে শুধু তিন পয়েন্টই পেল না; সাথে ফিরল আত্মবিশ্বাস, স্বস্তি আর ২২ বছরের পুরোনো গর্ব। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতবধের পর আবারও লাল-সবুজরা ছুঁয়ে দেখল সেই সুখের অনুভূতি।
ঢাকার মাঠে ম্যাচের প্রথম কয়েক মিনিটের মালিক ছিল ভারত। ডি-বক্সে একাধিকবার ঢুকে বিপদের আভাস ছড়ালেও বাংলাদেশ রক্ষণভাগে ছিলেন সতর্ক। ধীরে ধীরে ছন্দ খুঁজে পায় হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা।
এবং ১১ মিনিটেই এল সেই মুহূর্ত, যা বদলে দিল ম্যাচের চিত্র। মাঝমাঠ থেকে রাকিব হোসেনকে বল বাড়িয়ে সামনে দৌড় দেন শেখ মোরসালিন। রাকিবের আড়াআড়ি ক্রস ফিরে পেয়ে মোরসালিন নিখুঁত এক টোকায় বলটা পাঠিয়ে দেন ভারতের গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং সান্ধুর দুই পায়ের মাঝ দিয়ে। স্তব্ধ হয়ে যায় ভারতীয় রক্ষণ, আর গ্যালারি ভেসে ওঠে লাল-সবুজের উচ্ছ্বাসে।
গোল হজম করে ভারত আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ২০ মিনিটে গোলকিপার মিতুল মারমারের ভুলে বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ, তবে শেষ মুহূর্তে মাথা দিয়ে বল ক্লিয়ার করে দলকে রক্ষা করেন হামজা চৌধুরী।
৩৪ মিনিটে তপু ও বিক্রমের ধাক্কাধাক্কিতে মাঠে উত্তেজনা দেখা দেয়; দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের ঝড় থামাতে রেফারি দুজনকে হলুদ কার্ড দেখাতে বাধ্য হন। প্রথমার্ধে সুযোগ তৈরি করেও গোলের দেখা পায়নি আর কোনো দল। বাংলাদেশ তাই বিরতিতে যায় ১–০ লিড ধরে।
বিরতি থেকে ফিরেই ভারত দুইবার গোলের স্পষ্ট সুযোগ তৈরি করে। বাংলাদেশের ভাগ্য, শটগুলো লক্ষ্যভেদ করেনি কেউ। তবু ভারতের আক্রমণ থামেনি। বল দখলে এগিয়ে থেকেই বারবার চাপ তৈরি করে তারা; মিতুল, তপু, ইয়াসিন-সবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় বাংলাদেশ।
৭৮ মিনিটে তপু বর্মণের নেওয়া দূরপাল্লার শট ভারতের গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দেন। ৮৩ মিনিটে হাতায় বল লাগার ঘটনায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা পেনাল্টির দাবি তুললেও রেফারি তা নাকচ করেন। শেষ দশ মিনিট ছিল বাংলাদেশ ফুটবলের স্নায়ু পরীক্ষা। অতীতে বারবার শেষ মুহূর্তে গোল হজমের বেদনা বহন করা দল এবার ছিল দৃঢ়, সংযত, নিবেদিত। প্রতিটি ট্যাকল, প্রতিটি ব্লকে ছিল বাঁচা-মরার লড়াই।
পাঁচ ম্যাচ পর আন্তর্জাতিক জয়, বাছাইপর্বে প্রথম তিন পয়েন্ট, আর ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে নতুন ইতিহাস, সব মিলিয়ে এটি যেন ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক বিরল উৎসব!
