সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বিশ্বে নজিরবিহীন আইন পাস করেছে অস্ট্রেলিয়া। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে এই আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে। তবে আইন কার্যকরের আগেই এর নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড়সড় গলদ সামনে এসেছে। ১৩ বছর বয়সী কিশোরী ইসোবেল তার মায়ের ছবি ব্যবহার করে মাত্র ৫ মিনিটে বোকা বানিয়েছে স্ন্যাপচ্যাটের বয়স যাচাই প্রযুক্তিকে।
সম্প্রতি ইসোবেলের মোবাইলে স্ন্যাপচ্যাট থেকে একটি সতর্কবার্তা (নোটিফিকেশন) আসে। সেখানে বলা হয়, এই সপ্তাহে নতুন আইন কার্যকর হওয়ার আগেই তাকে প্রমাণ দিতে হবে যে তার বয়স ১৬ বছরের বেশি। অন্যথায় তাকে প্ল্যাটফর্মটি থেকে বের করে দেওয়া হবে।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসোবেল বলে, ‘আমি আমার মায়ের একটি ছবি নিয়ে এসে ক্যামেরার সামনে ধরতেই স্ন্যাপচ্যাট আমাকে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে দিল। উল্টো তারা বার্তা দিল ‘আপনার বয়স যাচাই করার জন্য ধন্যবাদ’।’
ইসোবেল আরও জানায়, সে শুনেছে কেউ একজন বিখ্যাত গায়িকা বিয়ন্সের ছবি ব্যবহার করেও বয়স যাচাই প্রক্রিয়ায় উতরে গেছে। বিষয়টি নিয়ে ইসোবেলের মা মেল বলেন, ‘মেয়ের এই কাণ্ডে আমার হাসি পেয়েছিল। আমি যা ভেবেছিলাম, ঠিক সেটাই ঘটেছে।’
২০২৪ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ শিশুদের সুরক্ষায় এই আইন প্রণয়নের ঘোষণা দেন। আইন অনুযায়ী, মেটা ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহারকারীর বয়স যাচাই করতে হবে। ব্যর্থ হলে কোম্পানিগুলোকে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৪৯ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার) জরিমানা গুনতে হবে।
মেটা ও স্ন্যাপচ্যাট ইতোমধ্যে সন্দেহভাজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করতে ‘ফেস স্ক্যান’ পদ্ধতি চালু করেছে। তবে সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগতভাবে বয়স যাচাই সম্ভব হলেও কোনো পদ্ধতিই নিখুঁত নয়। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, সাধারণ একটি হ্যালোইন মুখোশ ব্যবহার করেও ফেস স্ক্যান প্রযুক্তিকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
আইনটি নিয়ে অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইসোবেলের মা মেল মনে করেছিলেন, এই নিষেধাজ্ঞা বাবা-মায়েদের কিছুটা স্বস্তি দেবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখে সেই আশা ফিকে হয়ে গেছে।
পাঁচ সন্তানের বাবা ও স্মার্টফোনবিরোধী আন্দোলনকর্মী ড্যানি এলাচি বলেন, ‘প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নিজেদের মুনাফা বাঁচানোর বাইরে আর কিছু করবে এ বিশ্বাস আমাদের নেই।’
অন্যদিকে সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, শিশুরা এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলতে ভিপিএন বা অন্য উপায় খুঁজে নেবে। ইসোবেলও অকপটে স্বীকার করেছে, ‘যদি আমাকে নিষিদ্ধ করা হয়, আমি কেবল অন্য কোনো অ্যাপ খুঁজে নিয়ে তা ব্যবহার করব।’
স্ন্যাপচ্যাটের এক মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে তারা নিয়মিত কাজ করছেন এবং ইসোবেলের ঘটনাটি তেমনই একটি চ্যালেঞ্জ।
অজান্তেই মস্তিষ্কের ক্ষতি, সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা
যে সব কারনে ‘লাইক-শেয়ার’ দিলেও হতে পারে জেল
যুক্তরাজ্যে প্লাম্বিং ও কারিগরি পেশায় ঝুঁকছে তরুণরা