কলম্বিয়ার ইসরায়েলি দূতাবাসে কর্মরত সব ইসরায়েলি কূটনীতিককে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। সে সঙ্গে ইসরায়েলের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও স্থগিত করেছেন তিনি।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ফিলিস্তিনিদের সহায়তার জন্য স্পেন থেকে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌযানবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ১৩টি নৌযান ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হাতে আটকের ঘটনায় এমন সিদ্ধান্ত নেন কলাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যে ১৩টি নৌযান আটক করেছে ইসরায়েলের নৌবাহিনী, সেসব নৌযানে ক্রু এবং যাত্রী ছিলেন ২ শতাধিক। তাদের মধ্যে ম্যানুয়েল বেদোয়া এবং লুনা বারেতো নামের দুই কলম্বীয় নাগরিকও আছেন। আটকদের সবাইকে ইসরায়েলের বন্দরে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে উপকূল থেকে ১৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গাজা উপকূল থেকে ‘১৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে পৌঁছানোর পর স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৫৯টা মিনিটে ইসরায়েলি জাহাজগুলোর অবস্থান ধরা পড়ে।’
এতে আরও বলা হয়, আগের ফ্লোটিলাগুলোও ‘আক্রমণ বা আটকের ’শিকার হয়েছে। এটিকে আন্তর্জাতিক আইন ও জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়।
পরে গুস্তাভো পেত্রো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে সতর্ক করে বলেন, যদি এ তথ্য সত্যি হয়, তবে এটি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নতুন আন্তর্জাতিক অপরাধ হবে।
তিনি জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে করা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হচ্ছে। এর আগে এই সপ্তাহেই তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি স্থগিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
চলতি বছরের মে মাসেই ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন পেত্রো। তবে এবার তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে বাকি থাকা যেকোনো কূটনৈতিক প্রতিনিধিকে দ্রুত কলম্বিয়া ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলা করবে, যার মধ্যে ইসরায়েলি আদালতেও মামলা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের কলম্বিয়ার আইনজীবী দলকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা ফাউন্ডেশন, গ্লেবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা এবং সুমুদ নুসানতারা- এই চার আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ঐক্যমঞ্চ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বন্দর থেকে খাদ্য ও ওষুধে পূর্ণ ৪৩টি নৌযানের বহর নিয়ে গাজার উদ্দেশে রওনা দেয় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। জাহাজগুলোতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আছেন সুইডেনের পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক বর্ণবাদবিরোধী নেতা ও প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা এবং তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিলসহ ৪৪টি দেশের ৫০০ জন নাগরিক। এই নাগরিকদের কেউ পার্লামেন্টারিয়ান, কেউ আইনজীবী, কেউ রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী এবং কেউ বা স্বেচ্ছাসেবী।
বুধবার (১ আক্টোবর) ভূমধ্যসাগরের গাজা উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছিল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌবহর। সেদিন সন্ধ্যার পর গাজা উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় নৌবহরের চারপাশ ঘিরে ধরে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং বহরের ১৩টি নৌযান আটক করে। আটক নৌযানগুলোর মধ্যে কয়েকটির নাম জানা গেছে- স্পেক্টার, অ্যালমা, সাইরাস, হুগা, মালি প্রভৃতি।
গত ১৮ বছর ধরে গাজার সমুদ্র উপকূল অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। গাজায় কোনো সমুদ্রবন্দর নেই এবং ইসরায়েলের অবরোধের কারণে আন্তর্জাতিক কোনো জাহাজ বা নৌযান গাজা উপকূলের কাছাকাছি যেতে পারে না। ফ্লোটিলার নৌবহর সেখানে পৌঁছালে তা হবে ১৮ বছর গাজার উপকূলে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক নৌবহরের নোঙ্গর করা।
গাজার জলসীমায় ঢুকে পড়েছে ‘ফ্লোটিলার একটি নৌযান’
ফ্লোটিলায় আটক স্বেচ্ছাসেবীদের নেওয়া হচ্ছে ইসরায়েলে, পাঠানো হবে ইউরোপে
ফ্লোটিলা থেকে দুই শতাধিক অধিকারকর্মী আটক
ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ইউরোপ জুড়ে বিক্ষোভ