মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বিভিন্ন পণ্যে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। ২৭ আগস্ট থেকে নতুন এই শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। এতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ভারতের অন্যতম বড় রপ্তানি খাত পোশাক, রত্ন, গয়না ও চিংড়ি শিল্প। কর্মসংস্থানের সংকটে পড়েছেন লাখো শ্রমিক।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানায়, দক্ষিণ ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানির কেন্দ্র তিরুপ্পুরে এখন অস্বাভাবিক নীরবতা। একসময় যেখানে সেলাই মেশিনের শব্দে মুখরিত থাকত কারখানা, সেখানে এখন চালু রয়েছে হাতে গোনা কিছু মেশিন।
এন কৃষ্ণমূর্তি নামের এক কারখানা মালিক বলেন, সেপ্টেম্বরের পর থেকে করার মতো কিছুই থাকবে না। ২৫০ শ্রমিককে বসিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা হারানোর মূল কারণ হচ্ছে চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের তুলনায় উচ্চ মূল্য। ১০ ডলারের একটি ভারতীয় শার্ট নতুন শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হবে ১৬.৪ ডলারে, যেখানে একই পণ্য চীন থেকে আসে ১৪.২ ডলারে, বাংলাদেশ থেকে ১৩.২ ডলারে এবং ভিয়েতনাম থেকে ১২ ডলারে।
রত্ন ও গয়না খাতেও বিপর্যয়
মুম্বাইয়ের গয়না রপ্তানি অঞ্চলেও শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ভারতীয় হীরার গয়নার বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে এই বাজার ধসের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্রিয়েশন জুয়েলারির কর্ণধার আদিল কোটওয়াল বলেন, আমাদের লাভের মার্জিন মাত্র ৩-৪ শতাংশ। এর ওপর ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক চাপলে তা সহ্য করার উপায় নেই।
হীরা প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গুজরাটের সুরাট শহরের অনেক কারখানায় কর্মঘণ্টা ও উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেক শ্রমিককে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা ভবেশ ট্যাঙ্ক জানান, শ্রমিকদের মাসিক আয় হ্রাস পেয়েছে, কাজের দিন কমে এসেছে। এটা রীতিমতো সংকটকালীন অবস্থা।
চিংড়ি রপ্তানিতেও বড় ধাক্কা
বিশ্বের অন্যতম চিংড়ি রপ্তানিকারক ভারত এখন বড় ক্ষতির মুখে। শুল্কের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে দামও কমে গেছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের একজন রপ্তানিকারক ঠোটা জগদীশ বলেন, এটাই আমাদের মৌসুম। কিন্তু শুল্কের কারণে মার্কিন ক্রেতারা অর্ডার দিতে ভয় পাচ্ছেন। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।
চিংড়ি লার্ভা উৎপাদনকারী এমএস বর্মা জানান, আগে বছরে ১০ কোটি লার্ভা উৎপাদন করতেন, এখন তা ৬-৭ কোটিতেই থেমে যাচ্ছে। নতুন শুল্কের ফলে খাতে ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।
মন্দা মোকাবেলায় ভারতের পদক্ষেপ
ভারত সরকার কাঁচামালের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারসহ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বিকল্প বাজার খুঁজতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ এসেছে অনেক দেরিতে।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, আমরা বাণিজ্য মোড় ঘুরতে দেখব মার্কিন ক্রেতারা চলে যাবে মেক্সিকো, ভিয়েতনাম কিংবা বাংলাদেশে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও অবনতি
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কেও টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। দিল্লিতে নির্ধারিত বাণিজ্য আলোচনা বাতিল হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক কর্মকর্তা ভারতকে চীনের ঘনিষ্ঠ এবং রাশিয়ার মানি লন্ডারিংয়ের প্ল্যাটফর্ম বলেও মন্তব্য করেছেন।
বিশ্লেষক গোপাল নাদ্দুর মনে করেন, ট্রাম্পের অগ্রাধিকার নির্ধারণ এখন এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে। ভারতের উচিত দ্রুত আত্মনির্ভরতা বাড়ানো, বাজার বৈচিত্র্য করা এবং সুযোগ কাজে লাগানো।
চীনের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি
আজ বৈঠকে বসবেন নেতানিয়াহু 