শরতের শুরুতে প্রতিটি পাহাড়ের পাদদেশে এখন সবুজ ধানের সমারোহ। পাহাড়ের দিকে তাকালে নজর কাড়ে সবুজের ঢল। এই মৌসুমে ছোট-বড় পাহাড় যেন অন্যরকম সাজে সেজেছে। উঁচু-নিচু পাহাড়ের ঢালজুড়ে কচি সবুজ জুম ধানের চারা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য মানুষের নজর কাড়ে। দূর থেকে তাকালে মনে হয় সবুজ এক বিছানার চাদরে ঢেকে গেছে গোটা পাহাড়ি এলাকা। সেই সবুজ পাহাড়ের বুকে রয়েছে আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী জুম ঘর। এমন চিত্র দেখা মিলেছে বান্দরবান জেলায়।
আদিকাল থেকে পাহাড়ি জনপদে যেসব জুমের ধান উৎপাদিত হয় সেটি শুধু খাদ্যশস্য নয়, পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের সংস্কৃতির একটি অংশ। জুম চাষের প্রধান ফসল ধান।

জুমের পাশাপাশি মারফা, তিল, ভুট্টা ও বেগুনও ফসল হিসেবে চাষ করা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কৃষক সমতলে ধান চাষেও ঝুঁকছেন।
রুমা, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, রোয়াংছড়ি, থানচি, আলীকদম কিংবা বান্দরবান সদরের গ্রামাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, আগে যেখানে পরিত্যক্ত জায়গা ছিল সেখানে এখন সবুজ ধানের চারা দোল খাচ্ছে বাতাসে। সবুজ ধানের এ দৃশ্য দেখে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা বলছেন পাহাড়ে এখন সবুজ ধানের ঋতু চলছে।
জুম চাষিরা জানিয়েছেন, এ বছর বৃষ্টি ভালো হয়েছে, তাই ধানও ভালো হয়েছে। যার কারণে এ বছরে ঘরে চালও উঠবে বেশি। শুধু খাদ্য নয়, বাজারে ধানের চাল বিক্রি করে অনেক কৃষক পরিবার নগদ অর্থের জোগানও পান। ফলে তাদের সংসারে নেমে আসে আর্থিক স্বচ্ছলতা। এই শরতে সবুজ ধানের চোখ জুড়ানো উৎসব চলছে।
এরপর হেমন্তের আগমন ঘটবে। হেমন্ত মানে পাহাড়ের ধান পাকার উৎসবের আমেজ। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সামাজিক জীবনে ধান ঘিরে নানা রীতি-নীতি রয়েছে। কারও ঘরে নতুন ধান ওঠলে তা আত্মীয়-প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়া হয়। অনেক গ্রামে আয়োজন করা হয় নতুন ধান উৎসব (নবান্ন উৎসব)। এভাবেই সবুজ ধান শুধু পেট ভরায় না, মানুষকে কাছাকাছিও আনে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক ফারজানা হক বলেন, আমি তো ভাবতেই পারিনি পাহাড়ের ধানের দৃশ্য এত সবুজ হতে পারে। দূর থেকে মনে হয় যেন সবুজ গালিচা পেতে রাখা হয়েছে। ধানের ক্ষেতে বাতাস বইলে ঢেউ খেলে যায়, সত্যি মনটাই ভরে যায়। আমরা সাধারণত সমতলের ধানক্ষেত দেখেছি। কিন্তু পাহাড়ের বুকজুড়ে ধান চাষ এক ভিন্ন সৌন্দর্য। এটা শুধু প্রকৃতি নয়, মানুষের পরিশ্রম আর ভালোবাসারও প্রতিচ্ছবি।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এমএম শাহ্ নেয়াজ বলেন, পাহাড়ের জমি অনুকূলভাবে ব্যবহার করলে ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব। পাশাপাশি জৈব পদ্ধতিতে চাষ হওয়ায় ধান হয় তুলনামূলক স্বাস্থ্যসম্মত। ধানের পাশাপাশি পার্বত্যঞ্চলে মানুষজন অধিক লাভজনক হওয়ায় কফি-কাজুবাদাম চাষের দিকে ঝুঁকছে।
